ডার্বির পর বড় ক্লাবের হোঁচট খাওয়া বরাবরের ঐতিহ্য। সেই ঐতিহ্য বজায় রাখল ইস্টবেঙ্গল। দুর্দান্ত ফুটবল উপহার দিয়ে মোহনবাগানকে হারিয়ে ডুরান্ড সেমিফাইনালে উঠলেও শেষরক্ষা হল না। সেমিফাইনালে ডায়মন্ড হারবার এফসি–র কাছে ২–১ ব্যবধানে হেরে ডুরান্ড থেকে বিদায় নিল ইস্টবেঙ্গল। ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে অপরাজিত থেকেই গেলেন কিবু ভিকুনা।
কোয়ার্টার ফাইনালে মোহনবাগানের বিরুদ্ধে শুরু থেকেই হাই প্রেসিং ফুটবল খেলে বিপক্ষকে চাপে রেখেছিলেন মিগুয়েলরা। ডায়মন্ড হারবার এফসি–র বিরুদ্ধে সেই ফুটবল এদিন উধাও। সল ক্রেসপো, মিগুয়েলরা যে ফুটবল উপহার দিয়েছিলেন, এদিন তার ধারেকাছেও ছিলেন না। বরং প্রথমার্ধে কিবু ভিকুনার দলই আধিপত্য দেখিয়ে গেল। প্রতিআক্রমণে উঠে এসে বারবার ইস্টবেঙ্গল রক্ষণকে পরীক্ষার মুখে ফেলে দিচ্ছিলেন লুকা মাজসেন, স্যামুয়েল, জবি জাস্টিনরা।
ম্যাচের ৮ মিনিটেই ইস্টবেঙ্গল সমর্থকদের হৃদস্পন্দন বাড়িয়ে দিয়েছিলেন পল। বক্সের বাইরে থেকে মাটি ঘেঁষা জোরালো শট নিয়েছিলেন। কোনও রকমে বাঁচান ইস্টবেঙ্গল গোলকিপার প্রভসুখন গিল। ২২ মিনিটে প্রথম সুযোগ আসে ইস্টবেঙ্গলের সামনে। প্রায় ৩০ গজ দুর থেকে গোল লক্ষ্য করে জোরালো শট নিয়েছিলেন আনোয়ার আলি। বাঁদিকে ঝাঁপিয়ে কর্নারের বিনিময়ে বাঁচান ডায়মন্ড হারবার গোলকিপার মির্শাদ। ২ মিনিট পরই ইস্টবেঙ্গলকে বাঁচিয়ে দেয় বারপোস্ট। প্রতিআক্রমণে উঠে এসে জবি জাস্টিনের কাছ থেকে বক্সের মধ্যে বল পেয়েছিলেন স্যামুয়েল। তাঁর শট বার কাঁপিয়ে ফিরে আসে।
এই সময় একের পর এক আক্রমণ তুলে নিয়ে এসে ইস্টবেঙ্গল রক্ষণকে ব্যতিব্যস্ত রাখছিলেন ডায়মন্ড হারবারের ফুটবলাররা। ২৭ মিনিটে স্যামুয়েলের সেন্টার ৬ গজ বক্সের কোনায় পেয়েও বারের ওপর দিয়ে উড়িয়ে দেন জবি জাস্টিন। ৪২ মিনিটে মহেশ সিংয়ের সেন্টারে হেড করেছিলেন দিয়ামানতাকোস। অল্পের জন্য লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। প্রথমার্ধের ইনজুরি সময়ে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ এসেছিল ইস্টবেঙ্গলের সামনে। মহেশ সিংয়ের বাঁপায়ের শট ডায়মন্ড হারবারের গোলকিপার মির্শাদের হাত ছুঁয়ে পোস্টে লেগে ফিরে আসে। ফিরতি বল ডায়মন্ডের এরক ডিফেন্ডারের পায়ে গেলে গোলে ঢুকছিল। গোললাইন থেকে সেভ করেন মিকেল কোর্তাজার।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই দুটি পরিবর্তন করেন ইস্টবেঙ্গল কোচ অস্কার ব্রুজো। লালচুংনুঙ্গার পরিবর্তে প্রভাত লাকড়াকে এবং এডমুন্ডের জায়গায় জিকসন সিংকে মাঠে নিয়ে আসেন। ৫০ মিনিটে সুযোগ এসেছিল দিয়ামানতাকোসের সামনে। তাঁর শট সাইড নেটে আছড়ে পড়ে। ৫৪ আবার সুযোগ এসে গিয়েছিল দিয়ামানতাকোসের সামনে। মিগুয়েলের কর্নার আনোয়ার আলির মাথা ছুঁয়ে অরক্ষিত দিয়ামানতাকোসের কাছে পৌঁছয়। তাঁর হেড বাইরে যায়। ২ মিনিট পর বিপিনের শট বাঁচিয়ে ডায়মন্ডের পতন রোধ করেন মির্শাদ। এই সময় একের পর এক আক্রমণ তুলে নিয়ে এসে ডায়মন্ড রক্ষণকে ফালাফালা করে দিচ্ছিলেন ইস্টবেঙ্গল ফুটবলাররা। কিন্তু তিনকাঠি খুঁজে পায়নি।
৬৪ মিনিটে দিয়ামানতাকোসের কাছ থেকে বল পেয়ে দুরন্ত শট নিয়েছিলেন জিকসন সিং। দ্বিতীয় প্রচেষ্টায় বাঁচান মির্শাদ। ৬৬ মিনিটে এগিয়ে যায় ডায়মন্ড হারবার। পলের ফ্রিকিক আনোয়ারের মাথা ছুঁয়ে ৬ গজ বক্সে দাঁড়ানো মিকেলের কাছে যায়। দুরন্ত ব্যাকভলিতে গোল করেন ডায়মন্ডের এই স্প্যানিশ ডিফেন্ডার। পরের মিনিটেই প্রায়াশ্চিত্য আনোয়ার আলির। নিজেদের অর্ধে বল পেয়ে কিছুটা এগিয়ে গিয়ে ডায়মন্ড হারবারের মাঝমাঠ থেকে গোলার মতো শটে সমতা ফেরান লাল–হলুদের এই ডিফেন্ডার।
৭২ মিনিটে সল ক্রেসপোকে তুলে নিয়ে মহম্মদ রশিদকে নামান ব্রুজো। ৭৮ মিনিটে ইস্টবেঙ্গলের এগিয়ে যাওয়ার পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায় ক্রসবার। মিগুয়েলের বাঁপায়ের বাঁক খাওয়ানো শট বারে লেগে ফিরে আসে। ৮৩ মিনিটে আবার এগিয়ে যায় ডায়মন্ড হারবার। কর্নার থেকে জটলার মধ্যে বল পেয়ে ডায়মন্ডকে এগিয়ে দেন লাল–হলুদের প্রাক্তনী জবি জাস্টিন। পরের মিনিটেই সমতা ফেরানোর সুযোগ এসেছিল ইস্টবেঙ্গলের সামনে। মিগুয়েলের সেন্টারে শট করেছিলেন রশিদ। বল অল্পের জন্য লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। ম্যাচের বাকি সময়ে চাপ রাখলেও সমতা ফেরাতে পারেনি ইস্টবেঙ্গল। বরং ইনজুরি সময়ে ইস্টবেঙ্গলের জালে বল পাঠিয়েছিলেন লুকা। অফসাইডের জন্য বাতিল হয়ে যায়।