ডার্বির ৪৮ ঘন্টা আগেই বড় ধাক্কা। বাবার মৃত্যুর খবর পেয়ে আমেরিকা ফিরে গেছেন মাঝমাঠের প্রাণভোমরা মহম্মদ রশিদ। অশনি সংকেত দেখেছিলেন ইস্টবেঙ্গল সমর্থকরা। রশিদকে ছাড়াই ডার্বিতে মাঠে নামা ইস্টবেঙ্গলের কাছে ছিল অগ্নিপরীক্ষা। সেই অগ্নিপরীক্ষায় সসম্মানে উত্তীর্ণ লাল–হলুদ ব্রিগেড। মোহনবাগান সুপার জায়ান্টকে ২–১ ব্যবধানে হারিয়ে ডুরান্ড কাপের সেমিফাইনালে ইস্টবেঙ্গল। জোড়া গোল করে ইস্টবেঙ্গলের নায়ক দিমিত্রিয়স দিয়ামানতাকোস।
বেশ কয়েকবছর ধরে একের পর ডার্বি জিতে মোহনবাগান যেন আত্মতুষ্টিতে ভুগছিল। ম্যাচের আগের দিন জেসন কামিংসের মুখে ইস্টবেঙ্গলকে নিয়ে অবজ্ঞার কথা ফুটে উঠেছিল। এটাই যেন তাতিয়ে দিয়েছিল ইস্টবেঙ্গলকে। ম্যাচের প্রথম মিনিট থেকেই একেবারে ছিঁড়ে খেল মোহনবাগানকে। শুরুতেই গোলের সুযোগ এসেছিল ইস্টবেঙ্গলের সামনে। ৩ মিনিটে এডমুন্ডের শট কোনও রকমে আটকান বাগান গোলকিপার বিশাল কাইথ। মিনিট সাতেক পর হামিদের হেড অল্পের জন্য লক্ষ্যভ্রষ্ট। শুরুর ঝড় বুঝিয়ে দিয়েছিল, অস্কার ব্রজোর এই ইস্টবেঙ্গল বদলে গেছে।
তবে ১৭ মিনিটেই অশনি সংকেত নেমে এসেছিল ইস্টবেঙ্গলের ওপর। হ্যামস্ট্রিংয়ে চোট পেয়ে উঠে যান হামিদ আহদাদ। রশিদ নেই, চোট পেয়ে মাঠের বাইরে হামিদ, শক্তিশালী মোহনবাগানের বিরুদ্ধে কতক্ষণ লড়াই করবে ইস্টবেঙ্গল? আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল। কিন্তু অস্কার যে বদলে দিয়েছেন ইস্টবেঙ্গল ফুটবলারদের মানসিকতা। হামিদের অভাব বুঝতে দিলেন না পরিবর্ত হিসেবে মাঠে নামা দিয়ামানতাকোস। মাঝমাঠে রশিদের দায়িত্ব দারুণভাবে পালন করে গেলেন সল ক্রেসপো। রক্ষণে সিবিলে, আনোয়াররা অনবদ্য।
২২ মিনিটে আবার এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ এসেছিল ইস্টবেঙ্গলের সামনে। বিপিন সিংয়ের কাছ থেকে বল পেয়ে শট নিয়েছিলেন মহেশ। আবার বাগানের পরিত্রাতা বিশাল কাইথ। ২৭ মিনিটে মহেশ সিংকে বক্সের বাইরে ফাউল করলে ফ্রিকিক পায় ইস্টবেঙ্গল। বারের ওপর দিয়ে উড়িয়ে দেন মিগুয়েল। একের পর এক আক্রমণ তুলে নিয়ে এসে ৩৪ মিনিটে পেনাল্টি আদায় করে নেয় ইস্টবেঙ্গল। বিপিন সিংকে বক্সের মধ্যে পেছন থেকে ট্রিপ করেন আশিস রাই। পেনাল্টির নির্দেশ দেন রেফারি ভেঙ্কটেশ। পেনাল্টি থেকে বাঁপায়ের গড়ানো শটে গোল করে ইস্টবেঙ্গলকে এগিয়ে দেন দিয়ামানতাকোস। প্রথমার্ধে মোহনবাগানের একটাই মাত্র গোলমুখী শট। বক্সের বাইরে থেকে বাঁপায়ের শট নিয়েছিলেন আপুইয়া। যদিও বল তিনকাঠিতে ছিল না।
মোহনবাগান কোচ শুরুতে জিমি ম্যাকলারেনের সঙ্গে আক্রমণভাগে তরুণ পাসাং দোরজি তামাংকে রেখেছিলেন। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই পাসাংকে তুলে নিয়ে জেসন কামিংসকে নামিয়ে ভুল শুধরে নেন হোসে মোলিনা। ইস্টবেঙ্গলের রক্ষণের ওপর চাপ বাড়ে। এর মধ্যেই ৫২ মিনিটে আবার জ্বলে ওঠেন দিয়ামানতাকোস। এডমুন্ডের কাছ থেকে বল পেয়ে মিগুয়েল দেন মহেশ সিংকে। মহেশ বক্সের মধ্যে বল বাড়ান দিয়ামানতাকোসকে। বাঁ পায়ের নিখুঁত শটে ২–০ করেন দিয়ামানতাকোস।
৫৮ মিনিটে ব্যবধান কমানোর সুযোগ এসেছিল মোহনবাগানের সামনে। ম্যাকলারেনের ভলি গোললাইন থেকে সেভ করেন সিবিলে। তবে আক্রমণে চাপ বজায় রেখে ৬৮ মিনিটে ব্যবধান কমায় মোহনবাগান। লিস্টনের ফ্রিকিক বারে লেগে ফিরে এলে হেডে কর্নারের বিনিময়ে বাঁচান আনোয়ার আলি। কর্নার থেকে লিস্টন গড়ানো বল বাড়ান অনিরুদ্ধকে। তাঁর ডান পায়ের শট ইস্টবেঙ্গল গোলকিপার প্রভসুখন গিলের সামনে ড্রপ পড়ে জালে জড়িয়ে যায়। ৭৫ মিনিটে দিমিত্রি পেত্রাতোস, সুহেল ভাট, দীপেন্দু বিশ্বাসদের নামিয়েও কোনও কাজ হয়নি। ২–১ ব্যবধানে জিতে ডুরান্ড সেমিফাইনালে ইস্টবেঙ্গল। সামনে এবার কলকাতারই ডায়মন্ড হারবার এফসি। অন্য কোয়ার্টার ফাইনালে ডায়মন্ড হারবার ২–০ ব্যবধানে হারিয়েছে জামশেদপুর এফসি–কে।