‘পোডিয়ামে সবাই দুজন খেলোয়াড়কে লড়াই করতে দেখেছেন। দুজন নয়, আসলে আমরা ছিলাম তিনজন। আমার প্রতিপক্ষ, আমি ও আমার ছোট্ট সন্তান।’ ইনস্টাগ্রামে নাদা হাফেজের এই আবেগঘন পোস্ট দেখে অনেকেই অবাক হয়েছিলেন। দুজনই তো লড়াই করছিলেন, তিনজন কোথায়? তিনজন তো লড়াই করার নিয়ম নেই। আসলে গল্পটা অন্য জায়গায়।
মহিলাদের ফেন্সিংয়ে অলিম্পিকের যোগ্যতাঅর্জন করেছিলেন মিশরের নাদা হাফেজ। ২৬ বছর বয়সী নাদা পেশায় একজন চিকিৎসক। ৭ মাসের সন্তান গর্ভে নিয়েই তিনি প্যারিসে এসেছিলেন। প্রথম ম্যাচে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এলিজাবেথ তার্তাকোভস্কিকে ১৫–১৩ ব্যবধানে হারিয়ে হারিয়ে প্রি–কোয়ার্টার ফাইনালে উঠেছিলেন নাদা। শেষ ষোলোর লড়াইয়ে অবশ্য শেষরক্ষা হয়নি। দক্ষিণ কোরিয়ার হা–ইয়াং জিওনের কাছে ১৫–৭ ব্যবধানে হেরে অলিম্পিক থেকে বিদায় নেন।
বিদায় নেওয়ার সময় দর্শকরা উঠে দাঁড়িয়ে করতালিতে ভরিয়ে দেন নাদা হাফেজকে। দর্শকদের অভিবাদন গ্রহনের সময় চোখের জল বাধ মানেনি নাদার। আবেগে কেঁদে ফেলেন। পরে সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁর সেই আবেগের কারণ তুলে ধরেন নাদা। ইনস্টাগ্রামে লেখেন, ‘পোডিয়ামে আপনারা দুজন খেলোয়াড়কে লড়াই করতে দেখেছেন। দুজন নয়, আমরা তিনজন ছিলাম। আমার প্রতিপক্ষ, আমি ও আমার ছোট্ট সন্তান। যে এখনও পৃথিবীতে আসেনি। আমার গর্ভে রয়েছে। আমি ও আমার সন্তান শারীরিক ও মানসিকভাবে প্রতিপক্ষকে দারুণ চ্যালেঞ্জ জানাতে পেরেছি। এটা আমার কাছে গর্বের। আমার নারীসত্ত্বা পূর্ণতা পেয়েছে।’
উত্তর আফ্রিকার মিশরের রাজধানী কায়রো থেকে উঠে এসেছেন নাদা হাফেজ। এটা অবশ্য তাঁর প্রথম অলিম্পিক নয়। ২০১৬ রিও এবং ২০২১ টোকিও অলিম্পিকেও প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন। তবে দেশকে পদক এনে দিতে পারেননি। এবার শারীরিক প্রতিবন্ধকতা নিয়েও দুর্দান্ত লড়াই করেছেন। সত্যিই কুর্নিশ জানাতে হয় হয় নাদা হাফেজকে। নাদা হাফিজ লড়াইয়ে পাশে পেয়েছেন স্বামী ইব্রাহিম ইহাবকে। তাঁর অনুপ্রেরণাতেই অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় অলিম্পিকে আসা।
অন্তঃসত্ত্বা হয়েও অলিম্পিকের মতো আসরে নামাটা যে কতটা কঠিন, সেটা নাদাই জানেন। নিজের মুখেই স্বীকার করেছেন এই চিকিৎসক অলিম্পিয়ান। বলেছেন, ‘গর্ভাবস্থার এই যাত্রা বেশ কঠিন। জীবন ও খেলাধুলার ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য এই লড়াই কম তীব্র ছিল না। এটা আমার কাছে মূল্যবান।’ নাদার এই লড়াই সব নারীর কাছে অনুপ্রেরণার আলোকবর্তিকা।
আরও পড়ুনঃ শুটিংয়ে স্বপ্নিল কুশালের হাত ধরে প্যারিসে তৃতীয় পদক এল ভারতের ঘরে, বক্সিংয়ে হতাশ করলেন নিখাত জারিন
আরও পড়ুনঃ ক্যারিবিয়ান পেস ব্যাটারির বিরুদ্ধে দুরন্ত লড়াই ইতিহাস, জীবনযুদ্ধে হেরে গেলেন অংশুমান গায়কোয়াড়