অলিম্পিক চলাকালীন ‘নো সেক্স’। কার্যত এরকম একটা স্লোগান নিয়ে ২০২৪ সালের প্যারিস অলিম্পিক শুরু হতে চলেছে ২৬ জুলাই।
অতীতে অলিম্পিকে ক্রীড়াবিদদের যৌন কেলেঙ্কারিতে মুখ পুড়েছে আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির। কিন্তু গত কয়েকটি অলিম্পিক থেকে একেবারে অন্যরকম ভাবনাচিন্তা শুরু করেছে আন্তর্জাতিক অলিম্পিক সংস্থা। যৌনতা আটকাতে প্যারিসে অলিম্পিকের ভিলেজে ঘরের খাটগুলো একেবারে অন্যধরণের করা হয়েছে। কাঠের পায়াতে কার্ডবোর্ডের খাট। খাটের সাইজ এমন, পাশাপাশি দু’জন শোয়া যাবে না। একটি শরীরের ওপর আরও একটি শরীর উঠলেই কার্ডবোর্ডের সেই খাটটির ভেঙে পড়ার সম্ভাবনা প্রবল। ভিলেজের প্রতিটা ঘরে থাকছে দুটো করে খাট। দ্বিতীয় খাটটি টেনে নিয়ে এসে আরেকটি খাটের সঙ্গে জোড়া লাগানোও যাবে না। কারণ প্রত্যেকটি খাট ঘরের দেওয়ালের সঙ্গে স্ক্রু দিয়ে লাগানো। ফলে নিজেদের সুবিধে মতো কোনও ব্যবস্থাই করা যাবে না।
২০২০ সালে টোকিও অলিম্পিক হয়েছিল ২০২১ সালে। মারাত্মক কোভিডের কারণে খাটগুলো কার্ডবোর্ডের তৈরি করা হয়েছিল। কারণ ছিল দুটো, এক অলিম্পিকের আসরে যৌনতা বন্ধ করা। দ্বিতীয়ত, করোনা কালে সাবধানতা অবলম্বন করেছিল অলিম্পিক কমিটি। যাইহোক না কেন, টোকিও অলিম্পিকে যৌনতার ঘটনা সেভাবে ঘটেনি। সম্ভবত অন্যতম কারণ ছিল করোনা।
কিন্তু যৌনতার ঘটনা ছাপিয়ে যেতে পারে প্যারিসে। কারণ, শহরটার নাম প্যারিস। শিল্প ও সংস্কৃতির শহর এখানে। প্রেমেরও। ফলে এখানে ঘটতে পারে নানারকম ঘটনা। গেমস ভিলেজে অবশ্য ছেলে ও মেয়েদের থাকার জায়গা একেবারে আলাদা। তাই টোকিও অনুকরণ করেছে প্যারিস। একই কোম্পানির খাট প্যারিসেও ব্যবহার করা হচ্ছে। খাটগুলো অলিম্পিকের পরে ভেঙে ফেলা হবে। রিসাইকেল পদ্ধতিতে সেই খাট দিয়ে তৈরি হবে অন্যকিছু।
গেমস ভিলেজে ক্রীড়াবিদ, কোচ ও ম্যানেজার ছাড়া অন্য কারও প্রবেশ নিষিদ্ধ। ভিলেজে ছেলে ও মেয়েদের থাকার জায়গা একেবারে আলাদা। কিন্তু কড়া বিধিনিষেধ ক্রীড়াবিদদের মধ্যে নেই। কারণ অনেক মহিলা ক্রীড়াবিদের পুরুষ কোচ থাকেন। তিনি অনেক সময় প্র্যাকটিস করাতে আসেন মেয়েদের ভিলেজে। স্থানীয় মাঠে হালকা প্র্যাকটিস সেরে নেন। কিন্তু ঘরে ঢুকে যৌন মিলন কার্যত নিষিদ্ধ।
অলিম্পিক ভিলেজের মধ্যে যৌনতা নিয়ে অনেক ঘটনাই ঘটে। অনেক সময় তা নিয়ে আলোচনা হয় গোটা বিশ্বজুড়ে। অনেক ঘটনা প্রকাশ্যে আসে না, যদি না কেউ অভিযোগ করে বসে গেমস কমিটির কাছে।
অতীতে অলিম্পিকের পর ইউরোপের ক্রীড়াবিদরা প্রকাশ্যে স্বীকার করেছেন, ‘যৌনতার মাত্রা এতটাই বেড়ে গিয়েছিল অলিম্পিকের আসরে, ফোকাস নড়ে গিয়েছিল।’ তাঁদের মধ্যে একজন ম্যাথু সৈয়দ। ব্রিটিশ টিমের টেবল টেনিস খেলোয়াড় হিসেবে তিনি ১৯৯২ সালে বার্সিলোনা অলিম্পিকে গিয়েছিলেন। ফিরে এসে যৌনতার ঘটনা বলেছিলেন খোদ লন্ডন টাইমসে। সেখানে বলেছিলেন, ‘দিনের খাওয়ার এবং বিশ্রামের সময়টুকু বাদ দিয়ে পুরোটাই ব্যস্ত ছিলাম যৌনতায়। শুধু একজনের সঙ্গে নয়, বহুজন মেয়ে ক্রীড়াবিদের সঙ্গে।’ সৈয়দ বর্তমানে টিভি অ্যাঙ্কর। লেখক ও প্রকাশক। অলিম্পিকে নিয়ে তাঁর লেখা দুটো বই রয়েছে।
খোদ ২০১২ লন্ডন অলিম্পিকে দুই ব্রিটিশ মহিলা ক্রীড়াবিদকে বের করে দেওয়া হয়েছিল গেমস ভিলেজে থেকে, প্রকাশ্যে সঙ্গম করার অপরাধে। যদিও দু’জনের ইভেন্ট শেষ হয়ে গিয়েছিল। মাঝে–মধ্যে কিছু কিছু ঘটনা প্রকাশ্যে চলে আসে। বাকিটা থেকে যায় অন্তরালে। সে জন্য ইভেন্টে হয়ে গেলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ভিলেজ ছেড়ে দেওয়ার নিয়ম ক্রীড়াবিদদের ক্ষেত্রে। কিন্তু সবসময় সেই নিয়ম মানা সম্ভব হয় না। কারণ ফ্লাইটের টিকিট পাওয়া যায় না অনেকসময়। সে ক্ষেত্রে কিছুটা ছাড় দেওয়া হয়।
প্যারিস অলিম্পিকে গেমস ভিলেজে কিছু বিধিনিষেধ রাখা হয়েছে। বেঁধে দেওয়া হয়েছে কিছু সময়সীমা। যৌনতা বন্ধের জন্য এরকম নিয়মকানুন। আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির এসব ব্যবস্থার কথা শুনে ব্রিটিশ টিমের দু’টো অলিম্পিকে সোনাজয়ী ক্রীড়াবিদ লিজি আনর্ল্ডের অট্টহাস্য, ‘গেমস ভিলেজে দুটো বাড়ির মাঝখানে ঘাসের উপর দু’দেশের ক্রীড়াবিদকে দেখেছি উদ্দাম যৌনতায় মত্ত হতে। ফলে খাটের রকমফের করে এসব বন্ধ করা যাবে না। যৌনতা ইচ্ছে থাকলে উপায়ও রয়েছে।’ নিয়মজালে বেঁধে ফেলার সব উপকরণ মজুত থাকে বর্তমানে সবক’টি অলিম্পিকে। কিন্তু কে কার কথা শোনে। অলিম্পিকের শেষ বাঁশি বাজার আগে গোটা গেমস ভিলেজ আমাদের বোটানিক্যাল গার্ডেন, ভিক্টোরিয়ার মেমোরিয়্যাল অথবা রবীন্দ্র সরোবর লেকের চেহারা নেয়।
আরও পড়ুনঃ ৮১ বছর বয়সেও ‘কিস্তি মাত’, অনন্য নজির, দাবা অলিম্পিয়াডে যাচ্ছেন রানী হামিদ