৮১ বয়সে দাবা অলিম্পিয়াড! তাও আবার একজন মহিলা দাবাড়ুর! যে বয়সে বানপ্রস্থে যাওয়ার কথা, নাতি–নাতনিদের সঙ্গে সময় কাটানোর কথা, সেই বয়সেও কিনা দাবার বোর্ড মাতাচ্ছেন রানী হামিদ! এবছর সেপ্টেম্বর মাসে হাঙ্গেরির বুদাপেস্টে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া দাবা অলিম্পিয়াডে অংশ নিতে যাচ্ছেন বাংলাদেশের প্রথম মহিলা আন্তর্জাতিক মাস্টার। হ্যাঁ, অবাক হলেও এটাই সত্যি।
এবছর বাংলাদেশ থেকে ৫ জন মহিলা দাবাড়ু দাবা অলিম্পিয়াডে অংশ নেবেন। নিয়ম অনুযায়ী জাতীয় প্রতিযোগিতায় শীর্ষে থাকা ৫ দাবাড়ু দাবা অলিম্পিয়াডে খেলার সুযোগ পাবেন। প্রথম ৫ জনের মধ্যে ছিলেন না রানী হামিদ। জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে ওয়ালিজার সঙ্গে যুগ্মভাবে পঞ্চম স্থানে শেষ করেছিলেন রানী হামিদ। প্লে অফের লড়াইয়ে ওয়ালিজার কাছে হেরে যান। সেই সময় দাবা অলিম্পিয়াডে খেলার সুযোগ হাতছাড়া হয় রানী হামিদের।
বাংলাদেশের এই বর্ষীয়ান দাবাড়ুকে হাঙ্গেরিতে যাওয়ার সুযোগ এনে দিয়েছে জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে দ্বিতীয় স্থানে থাকা মহিলা ফিডে মাস্টার শারমীন সুলতানা শিরিন নাম প্রত্যাহার করে নেওয়ায়। তাঁর সন্তানের বয়স এখনও একবছর হয়নি। ওইটুকু ছোট বাচ্চাকে রেখে তিনি দাবা অলিম্পিয়াডে যেতে রাজি নন। তাই নাম প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। শিরিন নাম প্রত্যাহার করে নেওয়াতেই সুযোগ এসে গেছে রানী হামিদের সামনে।
জাতীয় মহিলা দাবায় ষষ্ঠ স্থান পাওয়ার পর অলিম্পিয়াডে সুযোগ হাতছাড়া হওয়ায় হতাশ হয়ে পড়েছিলেন রানী হামিদ। তবে শেষ পর্যন্ত সুযোগ এসে যাওয়ায় উচ্ছ্বসিত। ২ বছর পর আবার দাবা অলিম্পিয়াড হবে। ততদিন শরীর কেমন থাকবে জানেন না। আদৌও সুযোগ পাবেন কিনা, তাও জানেন না। তাই এবার অন্যান্য দাবাড়ুর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে আসতে চান। রানী হামিদের কথায়, ‘শেষ পর্যন্ত অলিম্পিয়াডে যেতে পারছি, এর থেকে ভাল কিছু হতে পারে না। সত্যিই খুব ভাল লাগছে। ২ বছর পর পর আবার অলিম্পিয়াড হবে। তখন শারীরিক অবস্থা কেমন থাকবে জানি না। পারফরমেন্সও ভাল নাও থাকতে পারে। বয়সের জন্য এখন অনেক ভুল হচ্ছে। প্লে অফেও ওয়ালিজার বিরুদ্ধে তিনটি ভুল করেছিলাম।’
৩৪ বছর বয়সে স্বামীর অনুপ্রেরণায় দাবা খেলা শুরু করেন রানী হামিদ। ১৯৮৫ সালে বাংলাদেশের প্রথম মহিলা আন্তর্জাতিক মাস্টারের স্বীকৃতি পান। রেকর্ড সংখ্যক ২০ বার জাতীয় চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন। এরমধ্যে ১৯৯৭ থেকে ১৯৮৪, টানা ৬ বার। শেষবার জাতীয় চ্যম্পিয়ন হন ২০১৯ সালে, ৭৫ বছর বয়সে। এটাও রেকর্ড। তিনবার ব্রিটিশ মহিলা দাবা চ্যাম্পিয়নশিপ খেতাব জিতেছেন। ২০১৭ সালে দিল্লি কমনওয়েলথ গেমসে সোনা জিতেছিলেন। ২০১৮ সালে রাশিয়ায় দাবা বিশ্বকাপে সাংবাদিকের চয়েস অ্যাওয়ার্ড পেয়েছিলেন।
রানী হামিদের গোটা পরিবারই খেলাধূলার সঙ্গে যুক্ত। প্রয়াত স্বামী লেফটেন্যান্ট কর্নেল এম এ হামিদ ছিলেন ক্রীড়া সংগঠক। রানী হামিদের বড় কায়সার হামিদ ফুটবল খেলতেন। দীর্ঘদিন ঢাকা মহমেডানে খেলেছন। ১৯৮০–১৯৯০ দশকে বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের অধিনায়ক ছিলেন। আর এক পুত্র সোহেল হামিদ ছিলেন জাতীয় স্কোয়াশ চ্যাম্পিয়ন। ছোট ছেলে প্রয়াত শাজাহান হামিদ ববি ছিলেন জাতীয় হ্যান্ডবল খেলোয়াড়। প্রথম ডিভিশন ফুটবল লিগেও খেলেছিলেন।
এটাই হয়তো জীবনের শেষ দাবা অলিম্পিয়াড। জীবনের শেষ দাবা অলিম্পিয়াডে ছাপ রাখতে চান রানী হামিদ। তরুণ প্রজন্মের বিরুদ্ধে কতটা চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিতে পারেন, সেটাই দেখার। কারণ, বয়সের ভারে যে তিনি ভারাক্রান্ত।