একযুগ পর আবার কি ইউরো কাপ ঘরে তুলতে পারবে স্পেন? না, খেতাব ধরে রাখবে ইংল্যান্ড। রবিবার ইউরো কাপ ফাইনালের আগে এটাই ছিল আলোচনার বিষয়। লামিলে ইয়ামাল, মোরাতা, ওলমো, উইলিয়ামসদের জন্য অনেকেই স্পেনকে এগিয়ে রেখেছিলেন। শেষপর্যন্ত স্পেনই বাজিমাত করে গেল। ইংল্যান্ডকে ২–১ ব্যবধানে হারিয়ে ১২ বছর পর আবার ইউরোপ সেরা স্পেন। এই নিয়ে চতুর্থবার ইউরো কাপ জিতল স্প্যানিশরা। স্পেনের হয়ে দুটি গোল করেন নিকো উইলিয়ামস ও মিকেল ওইয়ারসাবাল। ইংল্যান্ডের গোলটি কোল পালমারের।
ম্যাচের প্রথমার্ধে একেবারে জঘন্য ফুটবল। দুই দলকে দেখে একবারের জন্যও মনে হয়নি গোল করার মানসিকতা নিয়ে মাঠে নেমেছে কিংবা জেতার ইচ্ছে রয়েছে। বলের দখল স্পেনের বেশি থাকলেও মোরাতা, ওলমো, উইলিয়ামস, ইয়ামালরা ইংল্যান্ড গোলকিপার পিকফোর্ডকে পরীক্ষার মুখে ফেলতে পারেননি। পরীক্ষার মুখে পড়তে হয়নি স্পেন গোলকিপার সিমনকেও। শুরু থেকে স্পেন ঝড় তোলার চেষ্টা করলেও ইংল্যান্ড ১০ মিনিটের পর থেকে খেলায় ফেরার চেষ্টা করে। ১৬ মিনিটে স্পেন রক্ষণকে পরীক্ষার মুখে ফেলে দিয়েছিলেন কাইল ওয়াকার। তাঁর সেন্টার কর্নারের বিনিময়ে বাঁচান কুকুরেলা।
২৮ মিনিটে স্পেনের সামনেও একটা সুযোগ এসেছিল। ফাবিয়ান রুইজের শট ইংল্যান্ড ডিফেন্ডার মার্ক গুয়েরির গায়ে লেগে পিকফোর্ডের হাতে চলে যায়। প্রথমার্ধের শেষ দিকে হ্যারি কেনের সামনে একটা দারুণ সুযোগ এসেছিল। বেলিংহামের বাড়ানো বলে কেন শট নিয়েছিলেন। শেষ মুহূর্তে দারুণভাবে ব্লক করেন রডরিগো।ইনজুরি সময়ে ফিল ফোডেনের শট আটকান স্পেন গোলকিপার সিমন। দুই দল প্রথমার্ধে সতর্ক ফুটবল খেলায় সেভাবে গোলে সুযোগ তৈরি হয়নি।
দ্বিতীয়ার্ধে সম্পূর্ণ অন্যছবি। প্রথমার্ধের সঙ্গে একেবারেই মিল নেই। দুর্দান্ত গতিময় ফুটবল। শুরু থেকেই আক্রমণে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল স্পেন। প্রথমার্ধে নিস্প্রভ থাকা ইয়ামাল লুক শ–র নজর এড়িয়ে ইংল্যান্ড বক্সে বল বাড়ান। বাঁদিক থেকে উইলিয়ামসকে উঠে আসতে দেখে ফলস দেন মোরাতা। বাঁ পায়ের কোনাকুনি শটে গোল করেন উইলিয়ামস। মিনিটখানেক পরেই ব্যবধান বাড়ানোর সুযোগ এসেছিল স্পেনের সামনে। দানি ওলমোর শট অল্পের জন্য লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। ৫৫ মিনিটে আরও একটা সুযোগ এসেছিল স্পেনের সামনে মোরাতার শট ইংল্যান্ড গোলকিপার পিকফোর্ডকে পরাস্ত করে গোলে ঢোকার মুখে বিপদমুক্ত করেন জন স্টোনস।
৬০ মিনিটে হ্যারি কেনকে তুলে ওয়াটকিন্সকে নামান ইংল্যান্ড কোচ গ্যারেথ সাউথগেট। ইংল্যান্ডের খেলায় গতি আসে। ৬৩ মিনিটে ডি বক্সের মাথা থেকে বেলিংহাম ছোট্ট টার্নে বাঁপায়ে জোরালো শট নিয়েছিলেন। বল অল্পের জন্য লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। এই সময় সমতা ফেরানোর জন্য মরিয়া হয়ে উঠে ইংল্যান্ড। একের পর এক আক্রমণ তুলে নিয়ে আসতে থাকে স্পেনের রক্ষণে। তার মাঝেই ৬৬ মিনিটে ব্যবধান বাড়ানোর সুযোগ এসেছিল ইয়ামালের সামনে। মাঝমাঠ থেকে ভেসে আসা লম্বা সেন্টার ধরে বাঁ পায়ে শট নিয়েছিলেন। ডান দিকে ঝাঁপিয়ে কর্নারের বিনিময়ে বাচান ইংল্যান্ড গোলকিপার পিকফোর্ড।
৭০ মিনিটে মাইনোকে তুলে কোল পালমারকে নামান সাউথগেট। সাউথগেটের এই পরিবর্তনটা কাজে লেগে যায়। ৭৩ মিনিটে সেই পালমারই ইংল্যান্ডকে সমতায় ফেরান। বাঁদিক থেকে উঠে এসে বক্সের মধ্যে বল বাড়িয়েছিলেন বুকায়ো সাকা। বেলিংহাম সেই বল ধরে পেছনে থাকা পালমারকে ব্যাকপাস করেন। বক্সের বাইরে থেকে বাঁ পায়ের দুরন্ত শটে সমতা ফেরান পালমার। ৮১ মিনিটে আবার এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ এসেছিল স্পেনর সামনে। ইয়ামালের শট বাঁচিয়ে দলের নিশ্চিত পতন রোধ করেন ইংল্যান্ড গোলকিপার।
তবে ৮৭ মিনিটে আর দলকে বাঁচাতে পারেননি পিকফোর্ড। বাঁদিক থেকে উঠে এসে কুকুরেলা পাস ধরে দুরন্ত প্লেসিংয়ে ২–১ করেন ওইয়ারসাবাল। ম্যাচের ৮৯ মিনিটে সমতা ফেরানোর সুযোগ এসেছিল ইংল্যান্ডের সামনে। পালমারের কর্নারে রাইসের হেড প্রথমে প্রতিহত করেন স্পেন গোলকিপার সিমন। ফিরতে বলে হেড করেছিলেন মার্ক ওয়েহি। এবার গোললাইন থেকে বাঁচান দানি ওলমো। নিশ্চিত হয়ে যায় স্পেনের চতুর্থবারের ইউরো কাপ জয়।
আরও পড়ুনঃ শূন্য বলে ৭ রান! ১ বলে ১৩! অনন্য নজির ভারত–জিম্বাবোয়ে ম্যাচে, ভাগীদার যশস্বী–সিকান্দার
আরও পড়ুনঃ জকোভিচ যুগ কি শেষ? স্ট্রেট সেটে জিতে উইম্বলডন খেতাব ধরে রাখলেন আলকারাজ