ছোটবেলায় বাবা অজিত সিং যেদিন হাতে হকি স্টিক তুলে দিয়েছিলেন, সেদিন থেকেই চোখে স্বপ্ন ছিল অলিম্পিকে খেলার। এতদিন হয়তো স্বপ্নপূরণও হয়ে যেত। বাধা হয় দাঁড়ায় পিঠের একটা চোট। অলিম্পিকের স্বপ্নপূরণ থেকে ক্রমশ দূরে সরে গিয়েছিলেন। কঠিন সময় কাটিয়ে স্বপ্নপূরণের সামনে দাঁড়িয়ে সুখজিৎ সিং।
সুখজিতের গল্পটা একটু অন্যরকম। ২০১৮ সালে সদ্য জাতীয় শিবিরের মূল দলে ডাক পেয়েছিলেন। অনুশীলনে পিঠে একটা চোট পান। পিঠের সেই চোটের কারণে ডান পা সাময়িকভাবে অবশ হয়ে গিয়েছিল। ফলে জাতীয় দলের হয়ে খেলার স্বপ্ন আটকে যায়। প্রতিটা দিন বিছানায় শুয়ে সুখজিৎ ভাবতেন, তাঁর স্বপ্নের হকি ক্রমশ দূরে সরে যাচ্ছে। প্রায় ৫ মাস শয্যাশায়ী থাকার পর শারীরিক ও মানসিকভাবে একেবারে ভেঙে পড়েছিলেন।
সেই কঠিন দিনগুলির কথা স্মরণ করে সুখজিৎ বলেন, ‘সেই সময়টা ছিল আমার জীবনের সবচেয়ে কঠিন। প্রায় পাঁচ মাস শয্যাশায়ী থাকায় শারীরিক ও মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলাম। হাঁটতে পারতাম না, হকি খেলতে পারতাম না। এমনকি খাওয়ার মতো সহজ কাজগুলোও অসম্ভব হয়ে পড়েছিল। প্রতিদিন মনে হতো আমার হকি খেলার স্বপ্ন আরও দূরে সরে যাচ্ছে। হাল ছেড়ে দিয়েছিলাম।’ বাবা অজিত সিং সেই কঠিন দিনগুলিতে বারবার উৎসাহ দিয়েছিলেন। বাবার জন্যই স্বপ্নপূরণ হচ্ছে সুখজিৎ সিংয়ের। প্যারিস অলিম্পিকে ভারতীয় দলের আক্রমণভাগের তিনিই অন্যতম ভরসা।
বাবার অনুপ্রেরণায় সুস্থ হয়ে আবার মাঠে ফেরেন সুখজিৎ। ক্রমশ নিজেকে মেলে ধরেন। চোট থেকে সেরে ওঠার পর ২০২১–২২ মরশুমে আন্তর্জাতিক হকি প্রো লিগে আবার জাতীয় দলে ফিরে আসেন। স্পেনের বিরুদ্ধে জাতীয় দলের হয়ে অভিষেক ম্যাচেই গোল করেন। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি সুখজিৎকে। ২ বছর ধরে দুরন্ত পারফরমেন্স করে জাতীয় দলে জায়গা পাকা করেন। গত দু’বছরে অসাধারণ প্রতিভা ও ধারাবাহিকতা প্রদর্শন করে দেশের হয়ে ৭০টি ম্যাচ খেলেন গোল করেছেন ২০টি। ২০২৩ সালে ভুবনেশ্বরে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপে ৬ ম্যাচে ৩টি গোল করেছিলেন। গত বছর চেন্নাইয়ে এশিয়ান চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি এবং হ্যাংঝৌ এশিয়ান গেমসে সোনাজয়ী ভারতীয় দলের সদস্য ছিলেন। সম্প্রতি হকি প্রো লিগে পাঁচটি গোল করে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছেন সুখজিৎ।
সুখজিতের লক্ষ্য এবার প্যারিস অলিম্পিক। পক্ষপাত রোগ থেকে ফিরে আসা এই হকি তারকা বলেন, ‘গত দু’বছরে অবিশ্বাস্য উন্নতি করেছি। প্রতিটি ম্যাচেই শেখার অভিজ্ঞতা আমাকে উন্নতি করতে সাহায্য করেছে। আমার সম্পূর্ণ ফোকাস এখন প্যারিস অলিম্পিকে। দেশকে পদক এনে দেওয়াই লক্ষ্য।’
পাঞ্জাবের জলন্ধরে জন্মগ্রহণ করা সুখজিৎ সিংয়ের বাবা অজিত সিং পাঞ্জাব পুলিশের প্রাক্তন হকি খেলোয়াড়। বাবার অনুপ্রেরণায় ৬ বছর বয়সে হকি খেলা শুরু করেন। অজিত সিংয়ের অলিম্পিকে খেলার সুযোগ হয়নি। ছেলের মধ্যে দিয়ে স্বপ্নপূরণ করতে চেয়েছিলেন। অবশেষে তাঁর সেই স্বপ্নপূরণ হতে চলেছে। বাবার স্বপ্নপূরণ করতে পেরে গর্বিত সুখজিৎ। তিনি বলেন, ‘অলিম্পিকে খেলা সবসময়ই আমার ও আমার পরিবারের কাছে স্বপ্ন ছিল। যে কোনও ক্রীড়াবিদদের জীবন এটা স্মরণীয় ঘটনা। আমি সেই সুযোগ পেয়ে গর্বিত। কঠোর পরিশ্রম এবং উৎসর্গের ফল পেয়েছি। প্যারিসে সেরাটা উজার করে দিয়ে কোচ ও সতীর্থদের আস্থার প্রতিদান দিতে বদ্ধপরিকর।’
আরও পড়ুনঃ আবার জয়ে ফিরল ইস্টবেঙ্গল, পুলিশের ব্যারিকেড উড়িয়ে লিগ টেবিলের শীর্ষে লাল–হলুদ
আরও পড়ুনঃ সর্ষের মধ্যে ভূত! ইস্টবেঙ্গলের সৌরভকে সম্মান জানানোর গোপন সিদ্ধান্ত মোহনবাগানে পৌঁছে দিল কে?