প্রসিদ্ধ কৃষ্ণ শর্ট লেংথ ডেলিভারিতে পুল করেছিলেন হ্যারি ব্রুক। বল চলে যায় লং লেগে বাউন্ডারির ধারে ফিল্ডিং করা মহম্মদ সিরাজের হাতে। বলটা তালুবন্দীও করেছিলেন সিরাজ। কিন্তু শরীরের ভারসাম্য রাখতে পারেননি। তাঁর পা বাউন্ডারি লাইন স্পর্শ করে। জীবন পেয়ে যান ব্রুক। সিরাজের হাতে জীবন পেয়ে দুরন্ত সেঞ্চুরি ইংল্যান্ডের এই মিডল অর্ডার ব্যাটারের। ব্রুককে জীবন দানের প্রায়াশ্চিত্য করলেন সেই মহম্মদ সিরাজই। তাঁর দুরন্ত বোলিংয়ে ওভালে প্রায় হারা টেস্টে অবিশ্বাস্য জয় তুলে জিতে নিল ভারত। পঞ্চম টেস্টে ইংল্যান্ডকে ৬ রানে হারিয়ে সিরিজে সমতা ফেরালেন শুভমানরা।
২–১ ব্যবধানে সিরিজে পিছিয়ে থেকে ওভালে শেষ টেস্ট খেলতে নেমেছিল ভারত। জিতলেই সিরিজে সমতা ফেরানোর সুযোগ। সিরাজের ওই ক্যাচ মিসের মাশুল দিতে হচ্ছিল ভারতকে। জীবন পাওয়ার সময় ২১ বলে ১৯ রানে দাঁড়িয়ে ছিলেন ব্রুক। তিনি যখন আউট হন নামের পাশে ৯৮ বলে ১১১। ইংল্যান্ড ৩০১/৪। ততক্ষণে জয়ের গন্ধ পেয়ে গেছে ইংরেজরা। হ্যারি ব্রুক ও জো রুটের ১৯৫ রানের জুটিই ম্যাচের পার্থক্য গড়ে দিচ্ছিল।
প্রথম ইনিংসে ভারত তুলেছিল ২২৪। খুব বেশি লিড নিতে পারেনি ইংল্যান্ড। গুটিয়ে যায় ২৪৭ রানে। ২৩ রানে পিছিয়ে থেকে ভারত দ্বিতীয় ইনিংসে তোলে ৩৯৬। যশস্বী জয়সওয়াল করেন ১১৮, আকাশদীপ ৬৬, রবীন্দ্র জাজেদা ৫৩ ও ওয়াশিংটন সুন্দর ৫৩। জয়ের জন্য ইংল্যান্ডের সামনে লক্ষ্য দাঁড়ায় ৩৭৪। তৃতীয় দিনের শেষে ১ উইকেট হারিয়ে ৫০ রান তুলেছিল ইংল্যান্ড। দিনের শেষ বলে জ্যাক ক্রলিকে (১৪) তুলে নিয়েছিলেন মহম্মদ সিরাজ।
চতুর্থদিন সকালে বেন ডাকেট ও অধিনায়ক ওলি পোপ দলকে ভালই টানছিলেন। হাফ সেঞ্চুরি পার করার পরেই প্রসিদ্ধ কৃষ্ণর বলে আউট হন ডাকেট (৫৪)। এরপর পোপও বেশিক্ষণ ক্রিজে থাকতে পারেননি। ২৭ রান করে তিনি সিরাজের বলে এলবিডব্লু হন। ইংল্যান্ডের রান তখন ১০৬/৩। এরপরই ব্রুকের জীবন পাওয়া। সিরাজ যদি ব্রুকের ক্যাচটা ঠিকভাবে ধরতে পারতেন, ইংল্যান্ড চাপে পড়ে যেত।
জীবন পেয়েই বিধ্বংসী হয়ে ওঠেন ব্রুক। রীতিমতো টি২০ মেজাজে ব্যাট করতে থাকেন। অন্যপ্রান্তে জো রুট ছিলেন সতর্ক। এই জুটিই ইংল্যান্ডের জয়ের ভিত গড়ে দেন। শেষ পর্যন্ত আকাশদীপের বলে চালাতে গিয়ে আউট হন ব্রুক। ৯৮ বলে তিনি করেন ১১১। মারেন ১৪টি ৪ ও ২টি ৬। আকাশদীপকে পরপর দুটি বাউন্ডারি হাঁকানোর পর আবার চালাতে গিয়ে সেই সিরাজের হাতেই ক্যাচ দেন ব্রুক।
ব্রুক ফিরে যাওয়ার কিছুক্ষণ পরই চা–পানেপ বিরতি। সেই সময় ইংল্যান্ডের রান ছিল ৩১৭/৪। চা–পানের বিরতির পর সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন জো রুট। এটা তাঁর ৩৯ টেস্ট সেঞ্চুরি। সেঞ্চুরির দিক দিয়ে চতুর্থ স্থানে। পেরিয়ে যান কুমার সাঙ্গাকারাকে (৩৮)। সামনে শুধু শচীন তেন্ডুলকার (৫১), জ্যাক কালিস (৪৫) ও রিকি পন্টিং (৪১)। দিনের শেষ বেলায় রুট (১০২) ও জ্যাকব বেথেলকে (৫) তুলে নিয়ে ম্যাচ জমিয়ে দিয়েছিলেন প্রসিদ্ধ কৃষ্ণ। চতুর্থ দিনের শেষে বৃষ্টির জন্য যখন খেলা বন্ধ হয়, ইংল্যান্ডের রান তখন ৩৩৯/৬। জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল ৩৫ রান। ক্রিজে ছিলেন জেমি স্মিথ (২) ও জেমি ওভারটন।
পঞ্চম দিন সকালে দিনের প্রথম ওভারেই স্মিথকে (২) তুলে নেন সিরাজ। এরপর ওভারটন ও অ্যাটকিনসন লড়াই করেছিলেন। আবার ধাক্কা সিরাজের। ফেরান ওভারটনকে (৯)। ততক্ষণে জয়ের গন্ধ পেয়ে গেছে ভারত। এরপর জশ টাংকে (০) তুলে নেন প্রসিদ্ধ কৃষ্ণ। তখনও জয়ের জন্য ইংল্যান্ডের দরকার ছিল ১৪ রান। এরপর চোট পাওয়া ক্রিস ওকসকে নিয়ে লড়াই করছিলেন অ্যাটকিনসন।
ইংল্যান্ড ৩৫৭ রানে নবম উইকেট হারানোর পর ব্যাট করতে আসেন ক্রিস ওকস। বাঁ হাতটা স্লিংয়ে ঝোলানো, সোয়েটারের ভেতরে লুকানো। টানা ১৩ বল ওকসকে ব্যাটিং করারই সুযোগ দিলেন না অ্যাটকিনসন। দুই ওভারেই শেষ দুই বলে ১ রান নিয়ে স্ট্রাইক ধরে রাখেন। শেষ পর্যন্ত অ্যাটকিনসনের (২৯ বলে ১৭) স্টাম্প ছিটকে দিয়ে দেশকে অবিশ্বাস্য জয় এনে দেন মহম্মদ সিরাজ। ইংল্যান্ড গুটিয়ে যায় ৩৬৭ রানে। দুরন্ত বোলিং করে ১০৪ রানে ৫ উইকেট তুলে নেন সিরাজ। দলকে জয় এনে দিয়েই প্রায়শ্চিত্ত করলেন।