বিবাহবিচ্ছেদের মামলায় বিপাকে মহম্মদ সামি। কলকাতা হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছে, বিবাহবিচ্ছিন্ন স্ত্রী হাসিন জাহান এবং মেয়ে আয়রাকে প্রতি মাসে ৪ লক্ষ টাকা খোরপোশ দিতে হবে ভারতীয় ক্রিকেট দলের তারকাকে। এর মধ্যে হাসিন জাহান প্রতি মাসে পাবেন ১.৫০ লক্ষ টাকা এবং মেয়ে আয়রা পাবে ২.৫০ লক্ষ টাকা।
প্রাক্তন মডেল হাসিন জাহান ২০১৪ সালে মহম্মদ সামিকে বিয়ে করেছিলেন। ২০১৫ সালে তাঁদের একট কন্যা সন্তান হয়। হাসিন জাহান সামির বিরুদ্ধে পারিবারিক হিংসা এবং ব্যভিচারের অভিযোগ তুলে ২০১৮ সালে আলাদা হয়ে যান। তখন থেকেই তাদের বিবাহবিচ্ছেদের মামলা চলছে। দীর্ঘদিন ধরে ভরণপোষণ এবং অন্যান্য বিষয় নিয়ে আইনি লড়াইয়ের পর কলকাতা হাইকোর্ট খোরপোশ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে।
২০১৮ সালে প্রথমে আলিপুর আদালতে বিবাহবিচ্ছেদের মামলা করেছিলেন হাসিন জাহান। সেই মামলার রায়ে আলিপুর আদালত ২০১৮ সালে নির্দেশ দিয়েছিল, সামিকে প্রতি মাসে স্ত্রীর জন্য ৫০ হাজার টাকা ও মেয়ে আয়রার জন্য ৮০ হাজার টাকা দিতে হবে। হাসিন জাহান নিম্ন আদালতে আরও বেশি অর্থ দাবি করেছিলেন। নিজের জন্য ৭ লাখ টাকা ও কন্যার জন্য ৩ লাখ টাকা চেয়েছিলেন। কিন্তু আলিপুর আদালত তাঁর দাবি খারিজ করে জাহানের জন্য ৫০ হাজার টাকা ও মেয়ে আয়রার জন্য ৮০ হাজার টাকা দেওয়ার নির্দেশ দেয়। সেই রায়ের বিরুদ্ধে হাজিন জাহান কলকাতা হাইকোর্টে আবেদন জানান। এরপর কলকাতা হাইকোর্ট এই নতুন নির্দেশ দিয়েছে।
বিচারক অজয় কুমার মুখার্জি এই মামলার রায় দিতে গিয়ে বলেন, ‘দুই আবেদনকারীর আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হাসিন জাহানকে প্রতি মাসে ১.৫ লক্ষ টাকা ও কন্যা আয়রার জন্য ২.৫ লক্ষ টাকা দেওয়াটা যুক্তিসঙ্গত।’ আদালত এও জানিয়েছে, সামি চাইলে তাঁর কন্যার শিক্ষা এবং অন্যান্য খাতে খরচের জন্য আরও বেশি অর্থও দিতে পারেন। পাশাপাশি আলিপুর আদালতের রায় নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন কলকাতা হাইকোর্ট।
কলকাতা হাইকোর্টের এই রায়ে খুশি হাসিন জাহান। তিনি বলেন, ‘বিয়ের আগে আমি মডেলিং এবং অভিনয় করতাম। তখন আমার জন্য এটাই যথেষ্ট ছিল। বিয়ের পর সামি আমাকে পেশা ছাড়তে বাধ্য করেছিল। ও চেয়েছিল আমি একজন গৃহিণীর মতো সাধারণ জীবনযাপন করি। আমি আনন্দের সাথে তা মেনে নিয়েছিলাম। কিন্তু এখন আমার নিজের কোনও আয় নেই। সামিকে আমাদের ভরণপোষণের সব দায়িত্ব বহন করতে হবে। সেই কারণেই যখন সে তা অস্বীকার করেছিল তখন আমাদের আদালতের দ্বারস্থ হতে হয়েছিল। ঈশ্বরকে ধন্যবাদ যে আমাদের দেশে এমন একটি আইন আছে যা মানুষকে তাদের দায়িত্ব বহন করার নির্দেশ দেয়।’
আদালতের রায়ের প্রসঙ্গে হাসিন জাহানের আইনজীবী ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, ‘হাসিন জাহানের জন্য এই রায় যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ। ২০১৮ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত একের পর এক নানা জায়গায় ছুটে বেড়াচ্ছিলেন। অবশেষে কলকাতা হাইকোর্টে সুবিচার পেল। হাইকোর্ট ট্রায়াল কোর্টকে অন্তর্বর্তীকালীন আদেশের মূল আবেদনটি ৬ মাসের মধ্যে নিষ্পত্তি করার নির্দেশ দিয়েছে। ভরণপোষণের শুনানি শেষ করার জন্য যখন তারা ট্রায়াল কোর্টে ফিরে আসবে, তখন তা ৬ লক্ষ টাকায় উন্নীত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি, কারণ হাসিন জাহানের ভরণপোষণের আবেদনে দাবি ছিল ৭ লক্ষ টাকা এবং ৩ লক্ষ টাকা।’