তিনি নাকি যে কোনওদিন আইসিসি–র সভাপতি হয়ে যেতে পারেন। যে কোনওদিন মানে, যেদিন তিনি চাইবেন। যদি এখন চান, তবে এখন। যদি মনে হয়, বোর্ডের মেয়াদ শেষ করে কয়েকমাস পরে হবেন, তবে তাই। হ্যাঁ, এতটাই ক্ষমতাশালী জয় শাহ। বিশ্ব ক্রিকেটের কী দুর্ভাগ্য!
জগমোহন ডালমিয়াকে আইসিসি সভাপতি হতে গিয়ে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে। জমি তৈরি করতে হয়েছে। শারদ পাওয়ার বা শশাঙ্ক মনোহরদেরও দীর্ঘ অপেক্ষা করতে হয়েছে। কিন্তু এই কীর্তিমান যেদিন চাইবেন, সেদিনই হবেন। তাঁর এত ক্ষমতার উৎস কী? বলার জন্য কোনও পুরস্কার নেই। যেমন তাঁর বাবার নাম অমিত শাহ, এটা বলার জন্যও কোনও পুরস্কার নেই।
ভারতীয় ক্রিকেটের ইতিহাসে এ পর্যন্ত যাঁরা প্রশাসক এসেছেন, তাঁদের মধ্যে সবথেকে নিকৃষ্টমানের প্রশাসক হলেন এই জয় শাহ। প্রতিদিন তিনি নিজেই সেটা প্রমাণ করে চলেছেন। যেমন বাবু, তেমন পারিষদ। দু’লাইন ইংরাজিতে বলার ক্ষমতা নেই। প্রেস রিলিজ লেখা তো দূরের কথা, পড়েও মানে বোঝেন কিনা সন্দেহ। তাঁর নামে যে সমস্ত প্রেস রিলিজ দেওয়া হয়, পড়ে যদি মানে বুঝতেন, তাহলেও সই করতেন না।
যত দিন যাচ্ছে, বোর্ড সভাপতির পদটা যেন গৌণ হয়ে যাচ্ছে। সভাপতি কেউই নন, সচিবই সব। এটাই তিনি বোঝাতে চাইছেন। খোদ সভাপতিও বোধ হয় তেমনটাই বোঝাতে চাইছেন। তিরাশির বিশ্বজয়ী ক্রিকেটার বিনি। শুধু তাই নয়, তিরাশিতে সর্বাধিক উইকেট শিকারির নামও রজার বিনি। তাঁকে এখন বোর্ড সচিবের পারিষদ ছাড়া কিছু মনে হয় না।
বিশ্বকাপে কে অধিনায়ক হবেন? নির্বাচকরা জানেন না। কিন্তু সচিব আগাম ঘোষণা করে দিচ্ছেন। গৌতম গম্ভীর কোচ, বোর্ড নয়, তিনি আগাম টুইট করে দিলেন। কোন সফরে কাকে বিশ্রাম দেওয়া হবে? এটাও দল নির্বাচনী সভার আগেই সচিবের নামে ঘোষণা হয়ে যাচ্ছে। এমনকী, অনেক সময় লিখিত বিবৃতিও বেরিয়ে যাচ্ছে। এগুলো যে নির্বাচকদের ঘোষণা করতে হয়, নিদেনপক্ষে একটা দল নির্বাচনী সভা করতে হয়, সেগুলো বোধ হয় ভুলেই গেছেন। অবশ্য ভুলে গেছেন বললে মনে হবে, একসময় বোধ হয় জানতেন। আসলে, জানতেন বলেও মনে হয় না। এই সিস্টেমগুলো জানতে গেলে যেটুকু পড়াশোনা লাগে, ক্রিকেট বোধ লাগে, কোনওটাই তাঁর নেই। এমনকী ন্যূনতম শিষ্টাচার বা সৌজন্যবোধ টুকুও নেই।
ভারতের পাকিস্তানে যাওয়ার প্রসঙ্গ এলেই একটা সস্তা নাটক দেখা যায়। ভারত যাবে কি যাবে না, ঝুলিয়ে রাখে। পাকিস্তান প্রথমে আশাবাদী থাকে। এই দরজা, ওই দরজায় দরবার করে। মাঝে মাঝে ফাঁপা হুমকি ছাড়ে। পরে ভারতীয় বোর্ড বলে, সরকারের অনুমতি না থাকলে যাওয়া যাবে না। এই নিয়ে কয়েকমাস চলে। কারণ, বোর্ড জানে, আইসিসি–র কিছুই করার ক্ষমতা নেই। পরে একটা সময় বলা হয়, সরকার অনুমতি দেয়নি, তাই যাওয়া হবে না। আমরা অন্য কোথাও খেলব। ভারতের আবদার মেনে তখন ভেনু বদল হয়। নানা হাইব্রিড মডেল আমদানি হয়। বিষয়টাকে ভারতীয় বোর্ড মোটামুটি ধ্যাষ্টামোর স্তরে নিয়ে গেছে। অর্বাচীনদের হাতে ক্ষমতা থাকলে এমন ছেলেমানুষিই হয়।
বারবার সরকারকে কেন ঢাল হিসেবে খাড়া করা হয়! বোর্ড কি আদৌ দল পাঠাতে আগ্রহী? তারা কি সত্যিই এই মর্মে সরকারের কাছে আবেদন জানায়? কখন আইপিএলের সূচি, সেই দেখে ভোটের নির্ঘণ্ট হয়। ভোটের দিন ঘোষণার আগেই খসড়া সূচি তৈরি থাকে। সেখানে ক্রিকেট বোর্ড চাইলে পাক সফরে সরকারের এত আপত্তি? জট ছাড়াতে বোর্ড কী ভূমিকা নিয়েছে? যদি সরকার থেকে সামান্য একটা অনুমতি না আনা যায়, তাহলে অমিত শাহর এই নিষ্কর্মা পুত্রটিকে জামাই আদর করে বোর্ডে পুষে রাখার কী দরকার?
এবারের টি২০ বিশ্বকাপের কথাই ধরুন। এমন হাবভাব, যেন তিনিই বিশ্বকাপটা জেতালেন। প্রাইজ ডিস্ট্রিবিউশনের সময় কিছুতেই ছবির ফ্রেমের বাইরে যাবেন না। হ্যাংলার মতো ফ্রেমজুড়ে দাঁড়িয়ে থাকবেন। সবাই চ্যাম্পিয়নদের দেখতে চায়। তোমার এই শ্রীমুখটা কেউ দেখতে চায় না— এটা বলার মতো বোর্ডে কেউ নেই। ট্রফি নিয়ে ফেরার সময় মুম্বইয়ে ওই সেলিব্রেশন। যথারীতি হুডখোলা বাসে তিনি। কাপ হাতে এমনভাবে পোজ দিয়ে গেলেন, যেন বিরাট কোহলি বা রোহিত শর্মারা কেউ নন। তিনিই আসল বিশ্বজয়ী। আগাগোড়া চূড়ান্ত অব্যবস্থা, যার মধ্যমণি তিনি। কারণ, তাঁকে ফ্রেম জুড়ে থাকতে হবে। এই জাতীয় অনুষ্ঠান কীভাবে করতে হয়, এই সাধারণ বোধটুকুও নেই।
দেশের মাটিতে বিশ্বকাপ ফাইনাল। অথচ, তিরাশির বিশ্বজয়ী অধিনায়ক কপিলদেব ডাক পান না। টি২০ বিশ্বকাপ জয়ের সেলিব্রেশন। অথচ, ১৭ বছর আগের বিশ্বজয়ী অধিনায়ক ধোনি ডাক পান না। হ্যাঁ, এই হল জয় শাহদের প্রশাসনের নমুনা।
রাজা তোর কাপড় কই, এটা বলার মতো সেই শিশুটা কোথায় যে লুকিয়ে আছে!
আরও পড়ুনঃ মহিলাদের ক্রিকেটেও আধিপত্য, এশিয়া কাপে পাকিস্তানকে ৭ উইকেটে উড়িয়ে দিল ভারত