সকালের আলো তখনও ভালভাবে ফোটেনি। দিল্লি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের রানওয়ে সবেমাত্র স্পর্শ করেছে এয়ার ইন্ডিয়ার বিশেষ বিমান এআইসি২৪ডব্লিউসি। খবরটা বাইরে আসতেই গগনভেদী চিৎকার। দিল্লি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের বাইরে তখন কান পাতা দায়। শব্দের মাত্রা এতটাই, মনে হচ্ছিল যেন লালকেল্লা পর্যন্ত পৌঁছে যাবে। বিমানবন্দরের বাইরে তখন কাতারে কাতারে মানুষ। বিশ্বজয়ীদের বরণ করে নিতে। ১০ বছর ধরে দিল্লিতে রয়েছি। আমিও সুযোগ হাতছাড়া করতে চাইনি।
বুধবার রাত থেকেই মাঝে মাঝে বৃষ্টি। বৃষ্টি উপেক্ষা করেই বিশ্বজয়ী ক্রিকেটারদের বরণ করে নিতে মাঝরাত থেকেই হাজির শয়ে শয়ে ক্রিকেটপ্রেমী। ভোর থেকে আমিও যোগ দিয়েছিলাম তাঁদের সঙ্গে। কারও গায়ে জাতীয়ও পতাকা, কারও গায়ে দেশের নীল রঙের জার্সি। কেউ আবার জাতীয় পতাকার রঙে নিজেকে সাজিয়েছেন। অনেকের হাতে রোহিত, কোহলি, হার্দিক, বুমরা, সূর্যকুমারদের পোস্টার। ভোর হতেই সমর্থকদের উপস্থিতি আরও বাড়তে থাকে। অবশেষে এল সেই মহেন্দ্রক্ষণ। ৬টার একটু পরেই বিমানবন্দর থেকে একে একে বেরিয়ে এলেন রোহিত শর্মারা।
ক্রিকেটারদের একঝলক দেখার জন্য হুড়োহুড়ি। নিরাপত্তার বজ্র আঁটুনি ভেঙে ভেতরে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন অনেকেই। কিন্তু নিরাপত্তা এতটাই কড়াকড়ি ছিল, সুযোগ হয়নি কারও। গগনভেদী চিৎকারের মধ্যে দিয়ে হোটেলে যাওয়ার জন্য বাসে ওঠেন রোহিত শর্মারা। উদ্বেলিত ক্রিকেটপ্রেমীদের উদ্দেশ্যে বিশ্বকাপ ট্রফি তুলে ধরেন। ক্রিকেটার নামে তখন জয়ধ্বনি দিচ্ছিলেন ক্রিকেটপ্রেমীরা। সকলের উদ্দেশ্যে হাত নেড়ে বাসে ওঠেন ক্রিকেটাররা। ক্রিকেটারদের বাস বিমানবন্দর ছাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কয়েকশ গাড়ি পিছু নেয়। সমর্থকদের মুখে ‘ভারত মাতা কি জয়’।
বিমানবন্দর থেকে সোজা দিল্লির চাণক্যপুরীর আইটিসি মৌর্য হোটেলে যায় গোটা দল। হোটেলের বাইরেও হাজার হাজার সমর্থক অপেক্ষা করছিলেন। টিম বাস ঢুকতেই রোহিতদের নামে জয়ধ্বনি দিতে থাকেন সমর্থকরা। টিম বাস থেকে নেমে ভাঙড়া নাচতে নাচতে হোটেলে ঢোকেন সূর্যকুমার যাদব। তাঁর সঙ্গে যোগ দেন যশস্বী জয়সওয়াল, অর্শদীপ সিংরা। অধিনায়ক রোহিত শর্মাকেও পা নাচাতে দেখা যায়।
বিশ্বজয়ী দলকে স্বাগত জানাতে হোটেল কর্তৃপক্ষ বড় পোস্টার ও একটা ক্ষুদ্রাকৃতির টি২০ বিশ্বকাপ ট্রফিসহ জাতীয় পতাকা রঙে তৈরি তিনতলা কেক সাজিয়ে রেখেছিল। চ্যাম্পিয়ন্স শার্ট পরে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে যাওয়ার আগে কেক কাটেন হেড কোচ রাহুল দ্রাবিড় ও অধিনায়ক রোহিত শর্মা। বিরাট কোহলি, হার্দিক পান্ডিয়ারাও কেক কাটেন। এরপর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে দেখা করার জন্য তাঁর বাসভবনের উদ্দেশ্যে রওনা দেয় গোটা দল। হোটেল মৌর্য থেকে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন পর্যন্ত গোটা রাস্তা ‘নো এন্ট্রি’ করে দেওয়া হয়েছিল। বিমানবন্দর থেকে হোটেলে আসার পথে ক্রিকেটারদের পরিবারের সদস্যরা থাকলেও প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে শুধুমাত্র ক্রিকেটাররা ও দলের সাপোর্ট স্টাফরাই যান।