প্লেঅফের আশা আগেই শেষ হয়ে গিয়েছিল চেন্নাই সুপার কিংসের। বাকি ম্যাচ তাদের কাছে নিয়মরক্ষার। অন্যদিকে, প্লেঅফের আশা বাঁচিয়ে রাখতে গেলে বাকি ৩ ম্যাচে জেতা ছাড়া রাস্তা ছিল না কলকাতা নাইট রাইডার্সের কাছে। প্লেঅফের আগেই গতবারের চ্যাম্পিয়নদের বিদায় ঘন্টা কার্যত বাজিয়ে দিল চেন্নাই। গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে নাইটদের হারাল ২ উইকেটে। চেন্নাইয়ের কাছে হেরে নাইট রাইডার্সের প্লেঅফের সম্ভাবনা জিইয়ে রইল শুধুমাত্র কাগজেকলমে।
রাজস্থান রয়্যালসের বিরুদ্ধে টস জিতে বড় রান তুলেছিল নাইট রাইডার্স। এদিনও টস জিতে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন নাইট অধিনায়ক অজিঙ্কা রাহানে। কারণ, পরের দিকে উইকেটে বল স্পিন করতে পারে। তাই কোনও ঝুঁকি নেননি। রাহানের স্ট্র্যাটেজি ছিল আগের ম্যাচের মতোই বড় রান তুলে বিপক্ষকে চাপে ফেলা। দ্বিতীয় ওভারে রহমানুল্লাহ গুরবাজ (৯ বলে ১১) ফিরে গেলেও দলকে লক্ষ্যে রেখেছিলেন সুনীল নারাইন ও অজিঙ্কা রাহানে। এই দুই ব্যাটারের দাপটে পাওয়ার প্লে–র ৬ ওভারে ৬৭/১ তোলে নাইটরা।
পাওয়ার প্লে–র পরই নুর আমেদকে আক্রমণে নিয়ে আসেন মহেন্দ্র সিং ধোনি। আর তাতেই বেসামাল হয়ে পড়ে নাইটরা। নিজের প্রথম ওভারেই নারাইনকে (১৭ বলে ২৬) তুলে নেন নুর আমেদ। নারাইনকে স্টাম্পড করেন ধোনি। ৩ বল পরেই অঙ্গকৃষ রঘুবংশীকে (২ বলে ১) তুলে নেন নুর। উইকেটের পেছনে দারুণ ক্যাচ ধরেন ধোনি। পরপর ২ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে যায় নাইটরা। রান তোলার গতিও অনেকটাই কমে যায়। ১২ ওভারে ১০০ রান তোলে নাইটরা। অর্থাৎ পাওয়ার প্লে–র পরের ৬ ওভারে ওঠে মাত্র ৩৩।
১৩তম ওভারের দ্বিতীয় বলে বড় ধাক্কা খায় নাইট রাইডার্স। ছন্দে থাকা রাহানেকে (৩৩ বলে ৪৮) তুলে নেন জাদেজা। রাহানেকে তুলে নিয়ে চেন্নাইয়ের হয়ে আইপিএলে সর্বোচ্চ উইকেটশিকারী হয়ে গেলেন জাদেজা (১৪১)। ভেঙে দিলেন ডোয়েন ব্র্যাভোর রেকর্ড (১৪০)। এদিনও আন্দ্রে রাসেলকে ব্যাটিং অর্ডারে আগে পাঠানো হয়েছিল। তাংর দাপটেই রানের গতি বাড়ে নাইটদের। ২১ বলে ৩৮ রান করে আউট হন রাসেল। ৬ বলে ৯ রান করেন রিঙ্কু সিং। নির্ধারিত ২০ ওভারে ১৭৯/৬ তোলে নাইট রাইডার্স। বেঙ্কটেশ আয়ারের পরিবর্তে খেলতে নামা মণীশ পাণ্ডে ২৮ বলে ৩৮ রান করে অপরাজিত থাকেন। দুরন্ত বোলিং করে ৩১ রানে ৪ উইকেট নেন নুর আমেদ।
জয়ের জন্য ১৮০ রানের লক্ষ্য নিয়ে ব্যাট করতে নেমে দ্বিতীয় বলেই আয়ুশ মাত্রের (০) উইকেট হারায় চেন্নাই। ৩ নম্বরে ব্যাট করতে নামেন উর্ভিল প্যাটেল। আইপিএল
অভিষেকে দ্বিতীয় বলেই ছক্কা হাঁকিয়ে খাতা খোলেন উর্ভিল। দ্বিতীয় ওভারে আবার ধাক্কা চেন্নাইয়ের। বাঁহাতি ডেভন কনওয়ের কথা ভেবে দ্বিতীয় ওভারেই মইন আলির হাতে বল তুলে দিয়েছিলেন রাহানে। মইনের পঞ্চম বলে পরাস্ত হয়ে বোল্ড হন কনওয়ে (০)। মইনের ওই ওভারে অবশ্য দুটি ছক্কা ও একটা চার হাঁকিয়েছিলেন উর্ভিল।
ঘরোয়া টি২০ ক্রিকেটে দ্রুততম সেঞ্চুরির মালিক উর্ভিলের ঝড় অবশ্য বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। তৃতীয় ওভারের শেষ বলে তাঁকে তুলে নেন হর্ষিত রানা। ১১ বলে ৩১ রান করে তিনি আউট হন। মারেন ৪টি ৬ ও ১টি চার। পঞ্চম ওভারে রবিচন্দ্রন অশ্বিনকেও (৭ বলে ৮) তুলে নেন হর্ষিত। পরের ওভারে বরুণ চক্রবর্তীর শিকার রবীন্দ্র জাদেজা (১০ বলে ১৯)। পাওয়ার প্লে–র ৬ ওভারের মধ্যে ৬২ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে যায় চেন্নাই।
এরপরই শিবম দুবের সঙ্গে জুটি বেঁধে চেন্নাইকে ম্যাচে ফেরান ডিওয়াল্ড ব্রেভিস। একাদশ ওভারে বৈভব আরোরার বলে ৩টি করে চার ও ছয়সহ তোলেন ৩০। এক ওভার পরেই বরুণের বলে রিঙ্কু সিংয়ের হাতে ক্যাচ দিয়ে আউট হন ব্রেভিস (২৫ বলে ৫২)। ব্রেভিস যখন আউট হন চেন্নাইয়ের রান ১২.১ ওভারে ১২৭/৬। জয়ের জন্য তখন প্রয়োজন ছিল ৪৭ বলে ৫৩। এরপর চেন্নাইকে এগিয়ে নিয়ে যান শিবম দুবে ও ধোনি। দলকে জয়ের কাছাকাছি পোঁছে দিয়ে দলীয় ১৭০ রানের মাথায় আউট হন শিবম (৪০ বলে ৪৫)। নুর আমেদ (২ বলে ২) আউট হওয়ার পর চেন্নাইকে জয় এনে দেন ধোনি (১৮ বলে অপরাজিত ১৭) ও অনশুল কম্বোজ (১ বলে অপরাজিত ৪)। ২ বল বাকি থাকতে ৮ উইকেটে ১৮৩ রান তুলে ম্যাচ জিতে নেয় চেন্নাই।