ঘরের মাঠে নিউজিল্যান্ডের কাছে হোয়াইটওয়াশ হলেও ভারতীয় সমর্থকরা স্বপ্ন দেখেছিলেন অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজে দল ঘুরে দাঁড়াবে। কিন্তু সিরিজ, পরিবেশ বদলালেও ভারতীয় দলের রোগ যে সারেনি, প্রমানিত। আবার সেই ব্যাটিং ব্যর্থতা। ঘরের মাঠে স্পিনের বিরুদ্ধে অসহায় আত্মসমর্পন। এবার অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে জোরে বোলিংয়ের বিরুদ্ধে। বর্ডার–গাভাসকার ট্রফির প্রথম টেস্টে পার্থে মাত্র ১৫০ রানে গুটিয়ে গেল ভারতীয় দলের প্রথম ইনিংস। খারাপ ফর্ম অব্যাহত বিরাট কোহলির।
পার্থে সিরিজের প্রথম টেস্টে টস জিতে প্রথমে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন ভারত অধিনায়ক যশপ্রীত বুমরা। পার্থের গতিময় উইকেটে টস জিতে ব্যাটিং নেওয়াটা আত্মহত্যার সামিল। তিনি কেন এইরকম ভুল সিদ্ধান্ত নিলেন, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। বুমরার সিদ্ধান্ত কিছুক্ষণের মধ্যেই ভুল প্রমাণ করে দেন অস্ট্রেলিয়ার বোলাররা। তৃতীয় ওভারে যশস্বী জয়সওয়ালকে দিয়ে শুরু, তারপর মিছিলে সামিল বাকিরা। ৫০ ওভারও স্থায়ী হল না ভারতের ইনিংস। চা বিরতির আগেই ইনিংসের পরিসমাপ্তি।
ভারতের প্রথম একাদশে দিনে কয়েকটা চমক ছিল। যেমন দেবদত্ত পাড়িক্কলের সুযোগ পাওয়া, স্বীকৃত ব্যাটার হিসেবে ধ্রুব জুরেল প্রথম একাদশে। নীতীশ কুমার রেড্ডি, হর্ষিত রানার টেস্ট অভিষেক। রবিচন্দ্রন অশ্বিনের প্রথম একাদশে সুযোগ না পাওয়া। অপেক্ষাকৃত তরুণ দল নিয়েও যশপ্রীত বুমরার নেতৃত্বে যেভাবে দুর্দান্ত প্রত্যাঘাত হানল ভারত, সত্যিই অকল্পনীয়।
টস জিতে প্রথমে ব্যাট করলে নেমে তৃতীয় ওভারের প্রথম বলেই যশস্বীকে (০) তুলেনিয়ে ভারতকে প্রথম ধাক্কা দেন মিচেল স্টার্ক। এরপর ধৈর্যের পরীক্ষায় নামেন লোকেশ রাহুল ও দেবদত্ত পাড়িক্কল। একাদশতম ওভারের শেষ বলে পাড়িক্কল যখন ফিরলেন, ভারতের রান ১৪/২। ২৩ বল সতর্কভাবে সামলে কোনও রান করতে পারেননি পাড়িক্কল। ভারতীয় ক্রিকেটপ্রেমীরা তাকিয়েছিলেন কোহলির দিকে। হ্যাজেলউডের দ্রুতগতিতে ধেয়ে আসা অনেকটা লাফিয়ে ওঠা বলের কোনও জবাব ছিল না না কোহলির (৫) কাছে।
উইকেটে জমে গিয়েও আম্পায়ারের বিতর্কিত সিদ্ধান্তে আউট লোকেশ রাহুল (২৬)। ভারতীয় ‘এ’ দলের হয়ে ব্যাটিংয়ে নজরকাড়া ধ্রুব জুরেলও (১১) কামিন্সদের বিরুদ্ধে নিজেকে মেলে ধরতে পারেন না। ওয়াশিংটন সুন্দরের (৪) ব্যর্থতা আরও চাপ বাড়িয়ে দিয়েছিল। ফলে নিজের স্বাভাবিক খেলা ছেড়ে দলের স্বার্থে চরিত্রবিরোধী ব্যাটিংয়ে মনোযোগ দিতে হয় ঋষভ পন্থকে। ৭৮ বলে ৩৭ রানের ধৈর্যশীল ইনিংসের পরিসমাপ্তি কামিন্সের দুরন্ত ডেলিভারিতে। অভিষেক ম্যাচে ব্যাট হাতে ছাপ রাখলেন নীতীশ রেড্ডি। তাঁর ৪১ রানের সৌজন্যেই দেড়শ রানে পৌঁছতে সক্ষম হয় ভারত। ২৯ রানে ৪ উইকেট নেন জস হ্যাজেলউড। ২টি করে উইকেট মিচেল স্টার্ক, প্যাট কামিন্স ও মিচেল মার্শের।
যশপ্রীত বুমরার হাত ধরে পাল্টা প্রত্যাঘাত ভারতের। তৃতীয় ওভারে অভিষেক হওয়া নাথান ম্যাকসুইনিকে (১০) দিয়ে শুরু। সপ্তম ওভারে পরপর ২ বলে উসমান খোয়াজা (৮) ও স্টিভ স্মিথকে (০) তুলে নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিংয়ের মেরুদণ্ড ভেঙে দিয়েছিলেন বুমরা। অন্যদিকে, দুরন্ত ডেলিভারিতে ট্রাভিস হেডের (১১) স্টাম্প ছিটকে দিয়েছিলেন হর্ষিত রানা। মার্নাস লাবুশেন (২) ও মিচেল মার্শকে (৬) তুলে নিয়ে অস্ট্রেলিয়াকে কোণঠাসা করে দেন মহম্মদ সিরাজ। দিনের শেষে ৬৭ রানে ৭ উইকেট হারিয়ে ধুঁকছে অস্ট্রেলিয়া। ক্রিজে অ্যালেক্স ক্যারে (১৯) ও মিচেল স্টার্ক (৬)। যা পরিস্থিতি অস্ট্রেলিয়া ১০০ রানে পৌঁছতে পারে কিনা, তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। ১৭ রানে ৪ উইকেট তুলে নিয়ে আগুন ঝড়াচ্ছেন বুমরা।