তারুণ্যকে পেছনে ফেলে জয় হয়েছিল অভিজ্ঞতার। কোয়ার্টার ফাইনালে চোট নিয়ে দুরন্ত লড়াই করে কার্লোস আলকারাজকে হারিয়ে সেমিফাইনালে উঠে এসেছিলেন নোভাক জকোভিচ। কিন্তু সেই চোটই অস্ট্রেলিয়ান ওপেন থেকে ছিটকে দিল ‘জোকার’কে। সেমিফাইনালে আলেকজান্ডার জেরেভের বিরুদ্ধে প্রথম সেটের পরই চোটের জন্য ম্যাচ ছেড়ে দিতে বাধ্য হন জকোভিচ। একই সঙ্গে ২৫তম গ্র্যান্ড স্লাম জেতার স্বপ্নও আপাতত সলিলসমাধি।
বাঁ পায়ের চোট নিয়েই কোয়ার্টার ফাইনালে কোর্টে নেমেছিলেন জকোভিচ। আলকারাজের বিরুদ্ধে প্রথম সেট চলাকালীনও মেডিকেল টাইম আউট নিয়ে পায়ে ইনজুরি টেপ মেরে আবার কোর্টে ফিরেছিলেন। দুর্দান্ত লড়াই করে আলকারাজকে হারিয়ে সেমিফাইনালে উঠে এসেছিলেন। এদিন সেমিফাইনালে আলেকজান্ডার জেরেভের বিরুদ্ধে বাঁ পায়ে ইনজুরি টেপ লাগিয়ে খেলতে নেমেছিলেন। বোঝাই যাচ্ছিল, পু্রোপুরি ফিট নন জকোভিচ। প্রথম সেটে স্বাভাবিক ছন্দেও দেখা যায়নি। তা সত্ত্বেও ১ ঘণ্টা ২১ মিনিট লড়াই করেন। শেষ পর্যন্তে টাইব্রেকারে ৭–৬ (৭–৫) ব্যবধানে হেরে যান জকোভিচ।
প্রথম সেট হারের পরই বসে পড়েন জকোভিচ। তার পর কোর্ট থেকে উঠে নেটের কাছে গিয়ে জেরেভের সঙ্গে হাত মেলান। তখনই বিষয়টা পরিস্কার হয়ে যায়, তাঁর আর লড়াই করার ক্ষমতা নেই। জেরেভকে ম্যাচ ছেড়ে দেন জকোভিচ। জেরেভ বিশ্বাসই করতে পারছিলেন না, জকোভিচ ম্যাচ ছেড়ে দিচ্ছেন। এরপর রড লেভার এরিনায় দৃষ্টিকটূ ঘটনা ঘটে। ব্যাগ গুছিয়ে কোর্ট ছাড়ার সময় দর্শকদের উদ্দেশে হাত নাড়ছিলেন জকোভিচ। সেই সময় দর্শকরা তাঁর উদ্দেশ্যে কটূ মন্তব্য করেন। কোর্ট ছাড়ার সময় জকোভিচ দর্শকদের উদ্দেশ্যে বুড়ো আঙুল দেখান।
দর্শকদের এই আচরণ ভাল লাগেনি জেরেভের। তিনি বলেন, ‘চোটের কারণে কোনও খেলোয়াড় সরে দাঁড়ালে তার উদ্দেশ্যে কটূক্তি করবেন না। জানি সবাই টাকা দিয়ে টিকিট কেটে খেলা দেখতে এসেছেন। সবাই উপভোগ্য লনাই দেখতে চান। কিন্তু আপনাদের এটাও বুঝতে হবে, খেলোয়াড়দের চোট–আঘাত আসতেই পারে। এই টুর্নামেন্ট তলপেটে, হ্যামস্ট্রিংয়ে চোট নিয়ে জকোভিচ জিতেছে। ওর পক্ষে অসম্ভব ছিল বলেই এই ম্যাচে খেলা চালিয়ে যেতে পারেনি।’
জোকোভিচকে দর্শকদের দুয়ো দেওয়া ভালো লাগেনি জভেরেভের, ‘সবার আগে যে কথাটা বলতে চাই, দয়া করে চোটের কারণে কোনো খেলোয়াড় সরে দাঁড়ালে তাকে দুয়ো দেবেন না। জানি সবাই অর্থ খরচ করে টিকিট কিনেছেন এবং পাঁচ সেটের দারুণ ম্যাচ দেখতে চান সবাই। কিন্তু আপনাদের এটাও বুঝতে হবে গত ২০ বছর ধরে নোভাক জোকোভিচ টেনিসকে সর্বস্ব নিংড়ে দিয়েছেন। তিনি এই টুর্নামেন্ট তলপেটের চোট নিয়ে জিতেছেন, হ্যামস্ট্রিংয়ের চোট নিয়ে জিতেছেন। তার এই ম্যাচে খেলা চালিয়ে যেতে না পারার অর্থ হলো, সত্যি সত্যিই সেটা অসম্ভব।’
সরে দাঁড়ানোর পর জকোভিচ বলেন, ‘প্রথম সেটের শেষ দিক থেকেই ব্যথা ক্রমশ বাড়ছিল। সেটা সামলে খেলার মতো পরিস্থিতিতে আমি ছিলাম না। জানতাম, ৩–৪ ঘন্টা কঠিন লড়াই করতে হত। সেটা সম্ভব ছিল না।’ জকোভিচ শেষ গ্র্যান্ড স্লাম জিতেছেন ২০২৩ সালের ইউএস ওপেনে। এরপর সাতটি গ্র্যান্ড স্লাম থেকে ফিরেছেন খালি হাতে।