দেশকে সেমিফাইনালে তুলেই ভিআইপি স্ট্যান্ডে উঠে গিয়েছিলেন ভারতীয় দলের গোলকিপার শ্রীজেশ। পিটি ঊষা, দিলীপ তিরকেরা একে একে বুকে টেনে নিচ্ছিলেন শ্রীজেশকে। কেনই বা নেবেন না। অলিম্পিক হকিতে ভারতকে সেমিফাইনালে তোলার মূল কারিগড় যে তিনিই। গোটা ম্যাচে তিনকাঠির নীচে ছিলেন অপ্রতিরোধ্য। একের পর এক অবিশ্বাস্য সব গোল বাঁচিয়ে ম্যাচ টেনে নিয়ে গিয়েছিলেন পেনাল্টি শুট আউটে। সেখানেও দক্ষতার শীর্ষে উঠলেন শ্রীজেশ। কোনর উইলিয়ামসনকে যেমন বাইরে মারতে বাধ্য করেন, তেমনই রোপারের শট বাঁচান দুর্দান্ত দক্ষতায়।
২০২১ টোকিও অলিম্পিকে গ্রেট ব্রিটেনকে হারিয়ে হকিতে ব্রোঞ্জ জিতেছিল ভারত। এবার কোয়ার্টার ফাইনালে সামনে সেই ব্রিটেন। এবারও বাজিমাত ভারতের। শেষ আটের লড়াইয়ে পেনাল্টি শুট আউটে ব্রিটেনকে ৪–২ ব্যবধানে হারিয়ে সেমিফাইনালে উঠল ভারত। নির্ধারিত সময়ে খেলার ফল ছিল ১–১। সবথেকে বড় কথা, দলের সেরা ডিফেন্ডার অমিত রোহিদাসকে ছাড়াই ৪৩ মিনিট ছেলে দুর্দান্ত জয় তুলে নিল ভারত।
‘মর্নিং শো–জ দ্য ডে’ কথাটা সবসময় যে খাটে না, দেখিয়ে দিল ভারত। ম্যাচের শুরু থেকেই আক্রমণে ঝড় তুলেছিল ব্রিটেন। ব্রিটিশদের খেলা দেখে মনে হচ্ছিল টোকিও অলিম্পিকের হারের জ্বালা এখনও কাটিয়ে উঠতে পারেনি। একের পর এক আক্রমণ তুলে নিয়ে এসে প্রথম ৫ মিনিটেই ২টি পেনাল্টি কর্নার আদায় করে নেয় গ্রেট ব্রিটেন। দুটি শটই আটকে দেন অমিত রোহিদাস। পরের মিনিটেই একটা দুর্দান্ত শট আটকান শ্রীজেশ। প্রথম ১০ মিনিট ভারত রক্ষণ সামলাতে এতটাই ব্যস্ত ছিল, একবারও ব্রিটেনের বক্সে হানা দিতে পারেনি।
১০ মিনিটের পর থেকে ব্রিটেনের বক্সে আক্রমণ শানাতে থাকে ভারত। ১১ মিনিটে প্রতি আক্রমণে উঠে এসে আবার পেনাল্টি কর্নার আদায় করে নেয় ব্রিটেন। গোললাইন সেভ করেন জার্মানপ্রীত সিং। ১৪ মিনিটে অবশ্য পরপর তিনটি পেনাল্টি কর্নার পেয়েও কাজে লাগাতে পারেনি ভারত। ম্যাচের প্রথম কোয়ার্টার থাকে গোলশূন্য।
দ্বিতীয় কোয়ার্টারের শুরুতেই বড় ধাক্কা ভারতের। ম্যাচের ১৭ মিনিটের মাথায় লালকার্ড দেখে মাঠ ছাড়েন অমিত রোহিদাস। ১০ জন হয়ে যাওয়ার পরও এগিয়ে যায় ভারত। ২২ মিনিটে পেনাল্টি কর্নার থেকে গোল করে ভারতকে এগিয়ে দেন অধিনায়ক হরমনপ্রীত সিং। ২৭ মিনিটে ব্রিটেনের হয়ে সমতা ফেরান লি মর্টন।
তৃতীয় কোয়ার্টারে ব্রিটেনের আক্রমণ চাপ আরও বাড়ায়। দুটি পেনাল্টি কর্নার আদায় করে নিয়েও কাজে লাগাতে পারেনি। দুটি শটই আটকে দেন শ্রীজেশ। চতুর্থ কোয়ার্টারেও অপ্রতিরোধ্য ছিলেন ভারতীয় দলের এই অভিজ্ঞ গোলকিপার। বেশ কয়েকটা দুর্দান্ত সেভ করে ম্যাচ পেনাল্টি শুট আউটে নিয়ে যান।
পেনাল্টি শুট আউটে প্রথম গোল করে জেমস অলড্রিন ব্রিটেনকে এগিয়ে দেন। শ্রীজেশ দারুণ কভার করেও শেষরক্ষা করতে পারেননি। ভারতের হরমনপ্রীত সিং সমতা ফেরান। জ্যাক ওয়েলেস গোল করে ব্রিটেনকে ২–১ ব্যবধানে এগিয়ে দেন। সুখজিৎ সিং ২–২ করেন। কোণ ছোট করে দিয়ে কোনর উইলিয়ামসনকে বাইরে মারতে বাধ্য করেন শ্রীজেশ। ললিত উপাধ্যায় গোল করে ভারতকে ৩–২ ব্যবধানে এগিয়ে দেন। এরপর রোপারের শট আটকে দেন শ্রীজেশ। পঞ্চম পেনাল্টি শুট আউটে রাজকুমার গোল করে ভারতের জয় নিশ্চিত করে।