বুড়ো হাড়েও তিনি ভেল্কি দেখাতে ওস্তাদ। বয়স হলে কী হবে, গোল করার দক্ষতায় এখনও মরচে ধরেনি সুনীল ছেত্রীর। তাঁর জোড়া গোলের সুবাদেই পিছিয়ে পড়েও মহমেডানের বিরুদ্ধে দুর্দান্ত জয় তুলে নিল বেঙ্গালুরু এফসি। ম্যাচের ফল ২–১। এগিয়ে গিয়েও ৩ পয়েন্ট হাতছাড়া মহমেডানের। তিনকাঠির নীচে মহমেডান গোলকিপার ভাস্কর রায়ের দুরন্ত লড়াই কোনও কাজে এল না। মহমেডানের বিরুদ্ধে গোল করে আইএসএলের সব দলের বিরুদ্ধে গোল করার অনন্য নজির গড়লেন সুনীল।
আগের ম্যাচে স্ট্রাইকারদের ব্যর্থতায় ৯ জনের ইস্টবেঙ্গলকে হারাতে পারেনি মহমেডান। একাধিক গোলের সুযোগ নষ্ট করেছিলেন ফ্রাঙ্কা, অ্যালেক্সিজ গোমেজরা। বেঙ্গালুরু এফসি–র বিরুদ্ধে এদিন অ্যালেক্সিজের পরিবর্তে শুরু থেকেই মানজোকিকে মাঠে নামিয়েছিলেন মহমেডান কোচ আন্দ্রে চেরনিশভ। হীনমন্যতা না ভুগে ফুটবলারদের নির্দেশ দিয়েছিলেন আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলতে। ৭ মিনিটেই এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ এসেছিল মহমেডানের সামনে। কাশিমভের শট কর্নারের বিনিময়ে বাঁচান চিংলেনসানা। যদিও পরের মিনিটেই এগিয়ে যায় মহমেডান। কাশিমভের কর্নার থেকে দুরন্ত হেডে গোল করে দলকে এগিয়ে দেন মানজোকি। এগিয়ে গিয়েও চাপ বজায় রাখে মহমেডান। প্রথম ২৫ মিনিট তো কোনও সুযোগই তৈরি করতে পারেনি বেঙ্গালুরু। পরে আস্তে আস্তে খেলায় ফেরে।
দ্বিতীয়ার্ধে সমতা ফেরানোর জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে বেঙ্গালুরু এফসি। আক্রমণে চাপ বাড়াতে ম্যাচের ৫৩ মিনিটে সুনীল ছেত্রীকে মাঠে নামান বেঙ্গালুরু কোচ। একের পর এক আক্রমণ তুলে নিয়ে আসছিলেন সুনীলরা। এইসময় বেঙ্গালুরু আক্রমণভাগের ফুটবলারদের সঙ্গে লড়াইটা হচ্ছিল মূলত মহমেডান গোলকিপার ভাস্কর রায়ের।
৬৫ মিনিটে সুনীল ছেত্রীর দুরন্ত ফ্রিকিক ডানদিকে উড়ে গিয়ে বাঁচান মহমেডান গোলকিপার ভাস্কর রায়। ৬৭ মিনিটে আবার মহমেডানের পরিত্রাতা হয়ে ওঠেন ভাস্কর। সুনীলের বাঁপায়ের শট এবার বাঁদিকে ঝাঁপিয়ে বাঁচান। এদিন মহমেডানের পরিত্রাতা হয়ে ওঠেন তিনিই। বেশ কয়েকবার সঠিক সময়ে গোল ছেড়ে বেরিয়ে এসে দুর্দান্ত অনুমান ক্ষমতার পরিচয় দিলে দলকে বিপদের হাত থেকে বাঁচান।
৭৫ মিনিটে ব্যবধান বাড়ানোর সুযোগ এসেছিল মহমেডানের সামনে। অ্যালেক্সিজ গোমেজের ডানপায়ের কোনাকুনি শট বাঁদিকে ঝাঁপিয়ে কোনও রকমে কর্নারের বিনিময়ে বাঁচান বেঙ্গালুরু গোলকিপার গুরপ্রীত সিং। পরের মিনিটেই অ্যালেক্সিজের আরও একটা শট কোনও রকমে চাপড় মেরে বার করেন গুরপ্রীত।
৭৮ মিনিটে উইলিয়ামের শট ফিস্ট করে কর্নারের বিনিময়ে বাঁচান ভাস্কর রায়। কর্নার নেওয়ার সময় পেড্রোকে হাত দিয়ে আটকান মানজোকি। রেফারি ক্রিস্টাল জন সামনেই ছিলেন। তিনি সঙ্গে সঙ্গে পেনাল্টির নির্দেশ দেন। এবার আর সুনীলের শট আটকাতে পারেননি গোটা ম্যাচে দুর্দান্ত খেলা মহমেডান গোলকিপার ভাস্কর রায়। পেনাল্টি থেকে গোল করে সমতা ফেরান সুনীল ছেত্রী। এই গোলের সঙ্গে সঙ্গে আইএসএলে সব দলের বিরুদ্ধে গোল করার অনন্য নজির গড়লেন বেঙ্গালুরু এফসি–র এই বর্ষীয়ান স্ট্রাইকার।
৮৬ মিনিটে আবার দলকে এগিয়ে দেওয়ার সুযোগ এসেছিল মানজোকির কাছে। ডানদিক থেকে সেন্টার করেছিলেন রেমসাঙ্গা। মানজোকির হেড পোস্টে লেগে ফিরে আসে। শেষদিকে আক্রমণ প্রতিআক্রমণে খেলা দারুণ জমে ওঠে। ৮৮ মিনিটে রাহুল ভেকের শট গোলে ঢোকার মুখে আবার নিশ্চিত গোল বাঁচান মহমেডান গোলকিপার ভাস্কর রায়। ম্যাচের ইনজুরি সময়ে অ্যালেক্সিজের আরও একটা গোলমুখী শট প্রতিহত হয়। অবশেষে ম্যাচের একেবারে অন্তিম মুহূর্তে ‘বুড়ো’ সুনীলের হাত ধরেই জয় ছিনিয়ে নিল বেঙ্গালুরু।
আরও পড়ুনঃ অভিষেকের দুরন্ত ব্যাটিং, মিজোরামকে উড়িয়ে সৈয়দ মুস্তাকে টানা তৃতীয় জয় বাংলার
আরও পড়ুনঃ মহান উদ্যোগে চ্যারিটি ম্যাচ, ফিরে আসছে সোনালী অতীত, আবার একসঙ্গে মাঠে সুলে মুসা, ডগলাস, আলভিটোরা