৬৬ মিনিটে কোচ লিওনেল স্ক্যালোনি যখন তাঁকে মাঠ থেকে তুলে নেন, চোখে জল মেসির। রিজার্ভ বেঞ্চে দু’হাতে মুখ ঢেকে কাঁদছিলেন। জীবনের শেষ কোপা আমেরিকা কি হাতছাড়া হবে? হয়তো আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল মেসির মনে। অধিনায়কের আশঙ্কা সত্যি হতে দেননি লাউতারো মার্টিনেজ। অতিরিক্ত সময়ে করা তাঁর গোলেই কলম্বিয়াকে হারিয়ে রেকর্ড সংখ্যক ১৬ বার কোপা আমেরিকা জিতল আর্জেন্টিনা। অধিনায়ক হিসেবে পরপর তিনটি বড় প্রতিযোগিতায় দলকে চ্যাম্পিয়ন করলেন মেসি। লিওনেল মেসির কাছে ছিল এটাই শেষ কোপা আমেরিকা। আর ডি মারিয়ার কাছে দেশের হয়ে শেষ ম্যাচ।
ফাইনালে আর্জেন্টিনার কাজটা সহজ ছিল না। কারণ অপ্রতিরোধ্য কলম্বিয়ার সাম্প্রতিক পারফরমেন্স। সব ধরণের প্রতিযোগিতা মিলিয়ে টানা ২৮ ম্যাচ অপরাজিত থেকে এদিন আর্জেন্টিনার বিরুদ্ধে কোপার ফাইনাল খেলতে নেমেছিল কলম্বিয়া। কেন তারা টানা ২৮ ম্যাচ অপরাজিত, শুরু থেকেই বুঝিয়ে দিচ্ছিল। একের পর পর এক আক্রমণ তুলে নিয়ে ব্যতিব্যস্ত রাখছিল আর্জেন্টিনা রক্ষণকে। ৬ মিনিটেই গোলের সুযোগ এসেছিল কলম্বিয়ার সামনে। বাঁদিক থেকে উঠে এসে দারুণ শট নিয়েছিলেন লুইস দিয়াজ। দারুণভাবে বাঁচান আর্জেন্টিনা গোলকিপার এমিলিয়ানো মার্টিনেজ। পরের মিনিটেই পোস্ট বাধা হয়ে না দাঁড়ালে এগিয়ে যেত পারত কলম্বিয়া। কর্ডোবার শট পোস্টের বাইরের দিকে লেগে বেরিয়ে যায়। ১৩ মিনিটে আবার বিপদ সৃষ্টি হয়েছিল আর্জেন্টিনা বক্সে। কর্নার থেকে ভেসে আসা বলে হেড করেছিলেন কুয়েস্তা। বেরিয়ে এসে জটলার মধ্যে দারুণভাবে ধরে নেন এমিলিয়ানো মার্টিনেজ।
আর্জেন্টিনার সামনে গোলের প্রথম সুযোগ আসে ম্যাচের ২০ মিনিটে। বাঁদিক থেকে নীচু সেন্টার রেখেছিলেন ডি মারিয়া। সেই বলে শট নিয়েছিলেন মেসি। মেসির গোলমুখী শট কলম্বিয়ার এক ডিফেন্ডারের পায়ে লেগে প্রতিহত হয়। ৪৩ মিনিটে নিজেদের বক্সের বাইরে তাগলিয়াফিকোকে ফাউল করেছিলেন রায়স। ফ্রিকিক পায় আর্জেন্টিনা। মেসির ফ্রিকিকে হেড করেছিলেন তাগলিয়াফিকো। বল অল্পের জন্য বারের ওপর দিয়ে বেরিয়ে যায়। প্রথমার্ধে মেসি একেবারেই নিস্প্রভ ছিলেন। ফলে আর্জেন্টিনাকে কখনোই বিপজ্জনক মনে হয়নি। গোটা প্রথমার্ধ জুড়ে দাপট দেখিয়ে যায় কলম্বিয়া।
দ্বিতীয়ার্ধে সম্পূর্ণ অন্য ছবি। দারুণভাবে খেলায় ফিরে আসে আর্জেন্টিনা। লিসান্দ্রো মার্টিনেজ, দি মারিয়া, ম্যাক অ্যালিস্টাররা বারবার আক্রমণ তুলে নিয়ে আসছিলেন। এই সময় কলম্বিয়ার আসল রূপ বেরিয়ে আসে। আর্জেন্টিনায় ফুটবল দক্ষতার সঙ্গে পাল্লা দিতে না পেরে গা–জোয়ারি ফুটবলের আশ্রয় নেয়। লক্ষ্য ছিল মেসি। পরিকল্পনায় সফল হন কলম্বিয়ান ফুটবলাররা। ম্যাচের ৬৬ মিনিটে কোপা অভিযান শেষ হয়ে যায় লিওনেল মেসির। চোট পেয়ে বেরিয়ে যান। তাঁর পরিবর্তে মাঠে আসেন নিকো গঞ্জালেজ।
মেসি বেরিয়ে গেলেও আর্জেন্টিনার আক্রমণের তীব্রতা অবশ্য কমেনি। ডি মারিয়া, হুলিয়ান মার্টিনেজরা বারবার আক্রমণ তুলে নিয়ে আসেন। ৭৬ মিনিটে কলম্বিয়ার জালে বল পাঠিয়েছিলেন নিকো গঞ্জালেজ। অফসাইডের জন্য সেই গোল বাতিল করে দেন রেফারি। কলম্বিয়াও পিছিয়ে ছিল না। কার্লোস কুয়েস্তা, লুইস দিয়াজ, জেমস রডরিগেজরাও মাঝে মাঝে হানা দিচ্ছিল আর্জেন্টিনা বক্সে। কিন্তু কাজের কাজ কিছু করতে পারছিলেন না। নির্ধারিত সময়ে ম্যাচ গোলশূন্য থাকে।
অতিরিক্ত সময়েও আর্জেন্টিনার দাপট অব্যাহত ছিল। ৯৫ মিনিটে গোলের সুযোগ এসেছিল আর্জেন্টিনার সামনে। দুরন্ত গতি কলম্বিয়া বক্সে ঢুকে গঞ্জালেজকে বল বাড়িয়েছিলেন ডি পল। গঞ্জালেজের শট কলম্বিয়ার গোলকিপার ভার্গাসের হাতে চলে যায়। ১০২ মিনিটে কলম্বিয়ার জন আরিয়েসের শট বাঁচান এমিলিয়ানো মার্টিনেজ। ১০৮ মনিটে ডি মারিয়ার দুর্দান্ত সেন্টারে লিসান্দ্রো মার্টিনেজ পা ছোঁয়াতে পারলেই গোল পেতেন। কিন্তু তিনি ব্যর্থ হন। অবশেষে ১১২ মিনিটের মাথায় ১৬তম কোপা জয়ের সেই কাঙ্খিত গোল পেয়ে যায় আর্জেন্টিনা। কলম্বিয়ার অর্ধে সেন্টার সার্কেলের কাছে বল পেয়েছিলেন লো সেলসো। তিনি বল বাড়ান লাউতারো মার্টিনেজকে। ঠান্ডা মাথায় গোল করে দলকে কোপা এনে দেন তিনি।
জাতীয় দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পেয়ে ২০২১ সালে দেশকে কোপা জিতিয়েছিলেন লিওনেল মেসি। ২০২২ সালে বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন। ২০২৪ সালে আবার কোপা। এইরকম কৃতিত্ব আর কোন ফুটবলারের রয়েছে?
আরও পড়ুনঃ খেতাব ধরে রাখতে পারল না ইংল্যান্ড, একযুগ পর আবার ইউরোপ সেরা স্পেন