ভারত–পাকিস্তান ম্যাচ মানেই স্নায়ুচাপের লড়াই। আইসিসি–র প্রতিযোগিতায় ভারতের বিরুদ্ধে পাকিস্তান যে চাপ নিতে ব্যর্থ, অতীতে বারবার প্রমাণ পাওয়া গেছে। এবারের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতেও তারই পুনরাবৃত্তি। ভারতের কাছে ৬ উইকেটে হেরে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি থেকে কার্যত বিদায় নিল আয়োজক পাকিস্তান। অন্যদিকে, সেমিফাইনালে খেলা নিশ্চিত করল ভারত। দুরন্ত সেঞ্চুরি করে ভারতকে জেতালেন বিরাট কোহলি।
দুবাইয়ের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস জিতে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন পাকিস্তান অধিনায়ক মহম্মদ রিজওয়ান। নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে প্রথম ম্যাচে প্রচুর ডট বল খেলার খেসারত দিতে হয়েছিল পাকিস্তানকে। ভারতের বিরুদ্ধেও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে ১০৫টি ডট বল খেলেছিলেন রিজওয়ানরা। রবিবার ভারতের বিরুদ্ধে ১৫২টি। ইনিংসের প্রথম ১২০ বলের মধ্যে ৮০টিই ডট বল। এটাই ম্যাচের পার্থক্য গড়ে দেয়। শেষ ৯.৪ ওভারে পাকিস্তান তোলে মাত্র ৫৮ রান, হারায় ৫ উইকেট।
অথচ, এদিন শুরুটা একেবারে খারাপ করেনি পাকিস্তান। ফখর জামানের পরিবর্তে বাবর আজমের সঙ্গে ওপেন করতে নামেন ইমাম–উল–হক। দুজনে মিলে ৪১ রানের জুটি গড়েন। নবম ওভারের দ্বিতীয় বলে হার্দিক পান্ডিয়ার বলে উইকেটের পেছনে লোকেশ রাহুলের হাতে ক্যাচ দিয়ে আউট হন বাবর আজম (২৬ বলে ২৩)। পরের ওভারেই ইমামের (২৬ বলে ১০) আত্মঘাতী রান আউট। এটাই ব্যাকফুটে ঠেলে দেয় পাকিস্তানকে।
দুই ওপেনার আউট হওয়ার আগে পাকিস্তানের রানের গড় ছিল ৫–এর কাছাকাছি। প্রথম ১০ ওভারে তোলে ৫২/২। পরের ১০ ওভারে ওঠে মাত্র ২৭। পরের দিকে রানের গতি কিছুটা বাড়িয়ে অধিনায়ক মহম্মদ রিজওয়ান ও সৌদ শাকিল দলকে বড় ইনিংসের আশা দেখাচ্ছিলেন। ৭৭ বলে ৪৬ রান করে আউট হন রিজওয়ান। দুজনের ১৪৪ বলে ১০৪ রানের জুটি ভাঙার পরই দিকভ্রষ্ট হয় পাকিস্তান। রিজওয়ান ফিরে যাওয়ার পরের ওভারেই আউট হন শাকিল। ৫টি চারের সাহায্যে ৭৬ বলে ৬২ রান করেন তিনি। সলমান আগা (২৪ বলে ১৯), তৈয়াব তাহিরের (৪) ব্যর্থতা আরও চাপে ফেলে দেয় পাকিস্তানকে। খুশদিল শাহের ৩৯ বলে ৩৮ রান পাকিস্তানকে ২৪১ রানে পৌঁছে দেয়। ভারতের হয়ে ৪০ রানে ৩ উইকেট নেন কুলদীপ যাদব। ৩১ রানে ২ উইকেট হার্দিক পান্ডিয়ার।
জয়ের জন্য ২৪২ রানের লক্ষ্য নিয়ে খেলতে নেমে আগ্রাসী মেজাজেই শুরু করেছিলেন ভারতের দুই ওপেনার রোহিত শর্মা ও শুভমান গিল। ৩টি ৪ ও ১টি ছক্কার সাহায্যে ১৫ বলে ২০ রান করে শাহিন আফ্রিদির বলে বোল্ড হন রোহিত। এরপর ব্যাট করতে নামেন বিরাট কোহলি। শুভমানের সঙ্গে জুটি বেঁধে দলকে এগিয়ে নিয়ে যেতে থাকেন। ৫২ বলে ৪৬ রান করে আবরার আহমেদের বলে আউট হন শুভমান। তার আগে ৩৫ রানের মাথায় খুশদিল শাহের হাতে একবার জীবন পান।
এদিন ১৫ রান করার সঙ্গে সঙ্গে কোহলি একদিনের ক্রিকেটে দ্রুততম ১৪ হাজার রানের মাইলস্টোনে পৌঁছে যান। ২৮৭ ম্যাচে এই কৃতিত্ব অর্জন করলেন কোহলি। ৬২ বলে অর্ধশতরান পূর্ণ করেন কোহলি। এরপর কোহলির সঙ্গে জুটি গড়ে ভারতকে জয়ের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে থাকেন শ্রেয়স আয়ার। ৬৩ বলে হাফ সেঞ্চুরি করেন শ্রেয়স। শেষ পর্যন্ত তিনি ৬৭ বলে ৫৬ রান করে আউট হন। মারেন ৫টি চার এবং ১টি ছক্কা। হার্দিক ৮ রান করে আউট হন। বাউন্ডারি হাঁকিয়ে দলকে জয়ের লক্ষ্যে পৌঁছে দেন বিরাট কোহলি। একই সঙ্গে সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন। ৪২.৩ ওভারে ২৪৪/৪ তুলে ম্যাচ জিতে নেয় ভারত। শেষ পর্যন্ত ১১১ বলে ১০০ রান করে অপরাজিত থাকেন। মারেন ৭টি চার। পাক বোলারদের মধ্যে শাহিন আফ্রিদি ২টি উইকেট পান। যদিও তিনি ৮ ওভারে খরচ করেন ৭৪ রান।
আরও পড়ুনঃ পেত্রাতোসের শেষ মুহুর্তের গোলে ওড়িশাকে হারিয়ে টানা ২ বার লিগ–শিল্ড জয়, ইতিহাস গড়ল মোহনবাগান