দক্ষিণ আফ্রিকার গায়ে ‘চোকার্স’ তকমা আগেই সেঁটে গিয়েছে। ভারতও ক্রমশ সেদিকেই এগোচ্ছিল। ১১ বছর আইসিসি–র খেতাব জেতেনি, ১৩ বছর বিশ্বকাপ। বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে পরপর দুবার ফাইনালে উঠেও ব্যর্থ। এবার টি২০ বিশ্বকাপ না জিতলে অনায়াসে ‘চোকার্স’ তকমা লাগিয়ে দেওয়া যেত ভারতের গায়ে। যাক এই ‘ট্যাগ’ পাওয়ার হাত থেকে রক্ষা পেল। টানটান উত্তেজনার ফাইনালে প্রোটিয়াদের ৭ রানে হারিয়ে টি২০ বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন ভারত। দলকে চ্যাম্পিয়ন করে মহেন্দ্র সিং ধোনির কীর্তি স্পর্শ করলেন রোহিত শর্মা।
টস জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন ভারতীয় অধিনায়ক রোহিত শর্মা। প্রথম ওভারেই ঝড় তোলে ভারত। মার্কো জানসেনের প্রথম ওভারে ওঠে ১৫। দ্বিতীয় ওভারে কেশব মহারাজের প্রথম ২টি বলে বাউন্ডারি হাঁকান রোহিত (৫ বলে ৯)। চতুর্থ বলেই তিনি আউট। ষষ্ঠ বলে ঋষভ পন্থকে (২ বলে ০) তুলে নেন। পঞ্চম ওভারে কাগিসো রাবাদা তুলে নেন সূর্যকুমার যাদবকে (৪ বলে ৩)।
৪.৩ ওভারে ৩৪ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে যায় ভারত। এরপর দলকে টেনে নিয়ে যান বিরাট কোহলি ও অক্ষর প্যাটেল। পাওয়ার প্লে–র ৬ ওভারে ভারতের রান ছিল ৪৫/৩। ১৩.৩ ওভারে কুইন্টন ডিককের সরাসরি থ্রো–তে রান আউট হন অক্ষর প্যাটেল। ৩১ বলে তিনি করেন ৪৭। কোহলি ও অক্ষরের জুটিতে ওঠে ৭২ রান। অক্ষর আউট হওয়ার পর শিবম দুবেকে সঙ্গে নিয়ে দলকে এগিয়ে নিয়ে যান কোহলি।
৫৯ বলে ৭৬ রান করে আউট হন কোহলি। ৬টি চার ও ২টি ছয়। মারেন ১৬ বলে ২৭ রান করেন দুবে। শেষ পর্যন্ত ২০ ওভারে ১৭৬/৭ তোলে ভারত। শেষ বলে রবীন্দ্র জাদেজাকে (২ বলে ২) ফেরান নরখিয়া। কেশব মহারাজ ৩ ওভারে ২৩ ও আনরিখ নরকিয়া ৪ ওভারে ২৬ রান দিয়ে ২টি করে উইকেট নেন। মার্কো জানসেন ৪ ওভারে ৪৯ ও রাবাডা ৪ ওভারে ৩৬ রান দিয়ে ১টি করে উইকেট দখল করেন।
ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই ধাক্কা খায় ভারত। দ্বিতীয় ওভারেই রেজা হেনড্রিকসের (৪) স্টাম্প ছিটকে দেন যশপ্রীত বুমরা। পরের ওভারে মার্করামকে (৪) তুলে নেন অর্শদীপ সিং। দলকে লড়াইয়ে ফেরান কুইন্টন ডিকক ও ট্রিস্টান স্টাবস। ৮.৫ ওভারে তৃতীয় উইকেট হারায় দক্ষিণ আফ্রিকা। ট্রিস্টান স্টাবস ২১ বলে ৩১ রান করে অক্ষর প্যাটেলের বলে বোল্ড হন। ১২.৩ ওভারে ১০৬ রানের মাথায় আউট হন ডিকক। ৪টি চার ও ১টি ছয়ের সাহায্যে ৩১ বলে ৩৯ রান করেন তিনি। এরপর ঝড় তোলেন হেনরিখ ক্লাসেন। ২৩ বলে অর্ধশতরান পূর্ণ করেন তিনি।
এক সময় ট্রফি প্রায় পকেটে ভরে ফেলেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। ডেথ ওভারে ভারতকে ম্যাচে ফেরান যশপ্রীত বুমরা, হার্দিক পান্ডিয়া। ১৫ তম ওভারে অক্ষর প্যাটেলের বলে ২৪ রান তুলে ম্যাচ অনেকটাই নিজেদের অনুকূলে নেয় প্রোটিয়ারা। বুমরার ১৬তম ওভার টার্নিং পয়েন্ট। মাত্র ৪ রান দেন তিনি। দক্ষিণ আফ্রিকার জয়ের জন্য ২৪ বলে ২৬ রান দরকার ছিল। ১৬.১ ওভারে হার্দিক পাণ্ডিয়ার স্লোয়ার ডেলিভারিতে আউট হন ক্লাসেন। ২টি চার ও পাঁচটি ছয়ের সাহায্যে ২৭ বলে ৫২ রান করেন তিনি। শেষ ১৮ বলে দরকার ছিল ২২। ১৭.৪ ওভারে মার্কো জানসেনকে (৪ বলে ২) বোল্ড করেন বুমরা। শেষ ওভারের প্রথম বলে হার্দিক পাণ্ডিয়ার বলে ডেভিড মিলার (১৭ বলে ২১) আউট হতেই আশা শেষ হয়েযায় দক্ষিণ আফ্রিকার। পঞ্চম বলে রাবাদার (৩ বলে ৪) উইকেটও তুলে নেন হার্দিক পাণ্ডিয়া। দক্ষিণ আফ্রিকা ২০ ওভারে ৮ উইকেটে ১৬৯ রানের বেশি তুলতে পারেনি। হার্দিক পাণ্ডিয়া ৩ ওভারে ২০ রান দিয়ে নেন ৩ উইকেট। অর্শদীপ সিং ৪ ওভারে ২০ ও জসপ্রীত বুমরাহ ৪ ওভারে ১৮ রান দিয়ে নেন ২টি করে উইকেট।