দুবাইয়ে খেলা হওয়ায় ভারত নাকি বাড়তি সুবিধা পেয়েছে। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলতে আসা অনেক ক্রিকেটারই এমন দাবি করেছিলেন। ভারতের মহম্মদ সামিও সুবিধার কথা মেনে নিয়েছিলেন। সুবিধা কাজে লাগিয়েই কি ভারত চ্যাম্পিয়ন? এই নিয়ে বিতর্ক থাকবেই। তবে গোটা প্রতিযোগিতায় যেভাবে অপরাজিত থেকে চ্যাম্পিয়ন হলেন রোহিত শর্মারা, কোনও ভাবেই তাঁদের কৃতিত্বকে খাটো করে দেখা যাবে না। ফাইনালেও নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধেও সেই দাপট। কিউয়িদের ৪ উইকেটে উড়িয়ে ১২ বছর পর আবার চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জিতল ভারত। পরপর ২ বছর রোহিত শর্মার মুকুটে আইসিসি ট্রফি।
টস ভাগ্য যেন কিছুতেই সাহায্য করছে না রোহিত শর্মার। নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে ফাইনালেও টসে হার। এই নিয়ে টানা ১২ ম্যাচে টস হারলেন রোহিত। আর ভারতের একটানা ১৫ ম্যাচে। টস জিতে প্রথমে ব্যাটিং করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন নিউজিল্যআন্ড অধিনায়ক মিচেল স্যান্টনার। ভাল শুরু করেছিলেন দুই ওপেনার উইল ইয়ং ও রাচিন রবীন্দ্র। ওপেনিং জুটিতে ওঠে ৭৫। অষ্টম ওভারে আক্রমণে এসেই উইল ইয়ংকে (১৪ বলে ১১) তুলে নেন বরুণ চক্রবর্তী।
প্রথম পাওয়ার প্লে–র ১০ ওভারে লিউজিল্যান্ড তোলে ৬৯/১। আগ্রাসী ব্যাটিং করে দলকে দারুণভাবে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন রাচিন রবীন্দ্র। একাদশ ওভারের প্রথম বলেই কুলদীপের গুগলিতে বোল্ড হন। ২৯ বলে ৩৭ রান করেন রাচিন। তিনি ফিরে যাওয়ার পর কেন উইলিয়ামসনের ওপর দায়িত্ব ছিল দলকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার। কিন্তু তিনিও ব্যর্থ। ১৪ বলে ১১ রান করে কুলদীপের বলেই তাঁর হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান। সতর্কভাবে শুরু করলেও টম লাথামও (৩০ বলে ১৪) বেশিক্ষণ ক্রিজে থাকতে পারেননি।
১০৮ রানের মধ্যে ৪ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে যায় কিউয়িরা। মাঝের ওভারগুলিতে দারুণ বোলিং করছিলেন ভারতীয় স্পিনাররা। রান তোলার গতি অনেকটাই কমে যায় নিউজিল্যান্ডের। ড্যারিল মিচেল ও গ্লেন ফিলিপসের জুটি চাপ কাটিয়ে দলকে এগিয়ে নিয়ে যান। ফিলিপসকে (৫২ বলে ৩৪) তুলে নিয়ে জুটি ভাঙেন বরুণ চক্রবর্তী। মহম্মদ সামিকে তুলে মারতে গিয়ে কভারে রোহিতের হাতে ক্যাচ দেন ড্যারিল মিচেল (১০১ বলে ৬৩)। মাইকেল ব্রেসওয়েলের সৌজন্যে আড়াইশো রানের গণ্ডি পার করে নিউজিল্যান্ড। ৫০ ওভারে ৭ উইকেটে তোলে ২৫১। কুলদীপ যাদব ৪০ রানে ও বরুণ চক্রবর্তী ৪৫ রানে ২টি করে উইকেট নেন।
জয়ের জন্য ২৫২ রানের লক্ষ্য নিয়ে ব্যাট করতে নেমে দারুণ শুরু করেছিলেন ভারতের দুই ওপেনার রোহিত শর্মা ও শুভমান গিল। শুভমান সতর্ক থাকলেও অন্যপ্রান্তে ঝড় তুলেছিলেন রোহিত। ওপেনিং জুটিতে ১৮.৪ ওভারে ১০৫ রান তোলে ভারত। ১৯ তম ওভারে মিচেল স্যান্টনারের বলে শর্ট কভারে অবিশ্বাস্য ক্যাচ নিয়ে শুভমানকে ফেরান গ্লেন ফিলিপস। ৫০ বলে ৩১ রান করে আউট হন শুভমান। কোহলি ক্রিজে আসতেই মাইকেল ব্রেসওয়েলকে আক্রমণে নিয়ে আসেন স্যান্টনার। প্রথম বলেই ভারতকে বড় ধাক্কা দেন ব্রেসওয়েল। তাঁর বলে কোহলিকে এলবিডব্লিউ দেন পর রাইফেল। রিভিউ নিয়েও বাঁচেননি কোহলি (২ বলে ১)।
পরপর ২ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে যায় ভারত। চাপ আরও বাড়ে ২৭ তম ওভারের প্রথম বলেই রোহিত আউট হওয়ায়। ৮৩ বলে ৭৬ রান করে আউট হন রোহিত। মারেন ৭টি ৪ ও ৩টি ৬। এরপর চাপ কাটিয়ে ধীরে ধীরে দলকে এগিয়ে নিয়ে যান শ্রেয়স আয়ার ও অক্ষর প্যাটেল। স্যান্টনারের বলে দুরন্ত ক্যাচ নিয়ে শ্রেয়সকে (৬২ বলে ৪৮) ফেরান রাচিন। অক্ষর প্যাটেলকে (৪০ বলে ২৯) তুলে নিয়ে নিউজিল্যান্ডকে আবার ম্যাচে ফিরিয়ে নিয়ে আসেন ব্রেসওয়েল। তবে তাঁর দুরন্ত বোলিং কাজে লাগল না। লোকেশ রাহুল ও হার্দিক পাণ্ডিয়া জুটি ভারতকে জয়ের দিকে এগিয়ে দেন। ১৮ বলে ১৮ রান করে হার্দিক আউট হলেও ভারতের জয় আটকায়নি। ৬ বল বাকি থাকতে ২৫৪/৬ রান তুলে ১২ বছর পর আবার চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ঘরে তুলল ভারত। লোকেশ রাহুল ৩৩ বলে ৩৪ রান করে অপরাজিত থাকেন। ১০ ওভারে ২৮ রানে ২ উইকেট নেন ব্রেসওয়েল। ৪৬ রানে ২ উইকেট নেন স্যান্টনার।