কেটি লেডেকি তার আদর্শ। ছোট বয়স থেকেই এই মার্কিন সাঁতারুকে দেখে এগিয়ে চলা। কখনও দেখা হবে, স্বপ্নেও ভাবেনি। গত বছর স্বপ্নের নায়িকার জন্য একটা শুভেচ্ছা কার্ড বানিয়েছিলেন। যদি কখনও দেখা হয়, তুলে দেবেন। এত তাড়াতাড়ি যে সেই সুযোগ আসবে, স্বপ্নেও ভাবেনি ধিনিধি দেশিংহু। প্যারিস অলিম্পিকে অংশগ্রহনের থেকেও কেটি লেডেকির হাতে কার্ড তুলে দিতে পারবে, এতেই বেশি উত্তেজিত এই ভারতীয় সাঁতারু।
কে এই ধিনিধি দেশিংহু? সত্যিই নামটা একেবারেই অপরিচিত। বয়স মাত্র ১৪ বছর। এই বয়সেই অলিম্পিকে জলে নামার সুযোগ। সর্ব কনিষ্ঠ ভারতীয় হিসেবে। বন্ধুরা যখন আনন্দ উপভোগে ব্যস্ত, চোখে একরাশ স্বপ্ন নিয়ে জলের সঙ্গে লড়াই করতে হয় তাকে। কারণ, অনন্য প্রতিভাই যে অন্যদের সঙ্গে আলাদা করে দিয়েছে ধিনিধি দেশিংহুকে। মাঝে মাঝে একাকীত্বে ভোগে, বন্ধুদের আনন্দ করতে দেখে উদাসীন হয়ে যায়। স্বপ্নপূরণের পথে এগিয়ে চলার জন্য বন্ধুদের সঙ্গে সামান্যতম আনন্দ করার সময় টুকুও নেই। অলিম্পিকের প্রস্তুতিই যে তার কাছে অগ্রাধিকার।
সর্বকনিষ্ঠ সাঁতারু হিসেবে প্যারিস অলিম্পিকে কোটা পেয়েছে ধিনিধি দেশিংহু। এখনও ১৪ বছরের গন্ডি পার হয়নি। তার মধ্যেই অনন্য কৃতিত্ব বেঙ্গালুরুর এই নবম শ্রেনীর ছাত্রীর। মহিলাদের ২০০ মিটার ফ্রিস্টাইলে প্যারিসের টিকিট পেয়েছে ধিনিধি। তার সঙ্গে যাচ্ছেন শ্রীহরি নটরাজ দুজনই অবশ্য যোগ্যতাঅর্জন মান স্পর্শ করে কিংবা র্যাঙ্কিংয়ের মাধ্যমে প্যারিসের টিকিট পাননি। ‘ইউনিভার্সিটি কোটা’ দুজনের কাছে সুযোগ এনে দিয়েছে প্যারিসে যাওয়ার। ধিনিধির এটা প্রথম অলিম্পিক হলেও শ্রীহরি নটরাজ অবশ্য টোকিওতেও গিয়েছিলেন।
কীভাবে এল ধিনিধি, শ্রীহরির প্যারিস অলিম্পিকের টিকিট? প্যারিস ২০২৪ সাঁতারের যোগ্যতাঅর্জনের উইন্ডো ছিল ২০২৩–এর ১ মার্চ থেকে ২০২৪–এর ২৩ জুন। এই সময়ের মধ্যে কোনও ভারতীয় সাঁতারু অলিম্পিক যোগ্যতা মান সময় বা অলিম্পিক বিবেচনার সময় অর্জন করতে সক্ষম হয়নি। ভারতীয় সুইমিং ফেডারেশনের কাছে বিকল্প রাস্তা ছিল সর্বজনীনতা কোটার অনুরোধ। এই কোটার নিয়ম, কোনও যোগ্য ক্রীড়াবিদ বা রিলে দল ছাড়াই একটা ইভেন্টে সর্বাধিক দুইজন ক্রীড়াবিদ, একজন মহিলা ও একজন পুরুষ প্রবেশ করতে পারে। তবে সেই অ্যাথলিটদের ২০২২ ও ২০২৪ বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপের এক বা একাধিক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে হবে।
শ্রীহরি জাপানের ফুকুওকাতে ওয়ার্ল্ড অ্যাকুয়াটিকস চ্যাম্পিয়নশিপ ২০২৩–এ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। অন্যদিকে, ধিনিধি কাতারের দোহাতে অনুষ্ঠিত ২০২৪ বিশ্ব সাঁতারে নেমেছিলেন। পুরুষ বিভাগে শ্রীহরি ৮৪৯ পয়েন্ট নিয়ে বিশ্ব অ্যাকোয়াটিক্স পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে ছিলে। ধিনিধি ৭৪৯ য়েন্ট নিয়ে মহিলাদের টেবিলে শীর্ষে ছিলেন। ১৪ বছর বয়সী ধিনিধি দেশিংহু এবং শ্রীহরি নটরাজকে ‘ইউনিভার্সিটি কোটার’ অধীনে প্যারিসে যাচ্ছে।
অলিম্পিকে সুযোগ পেয়ে রীতিমতো উত্তেজিত ধিনিধি। তার কথায়, ‘ভারতীয় অলিম্পিক দলের অংশ হতে পেরে আমি উত্তেজিত। সেরা ক্রীড়াবিদদের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পাব। এটা আমার কাছে সবে শুরু। দীর্ঘ পথ যেতে হবে। অলিম্পিক ভিলেজে থাকার অনুভূতি অনুভব করতে চাই। বিশ্বমানের ক্রীড়াবিদদের নিষ্ঠা, মনোযোগ এবং প্রস্তুতি দেখতে চাই। পারফরমেন্স নিয়ে ভাবছি না। কারণ এটা আমার শেখার সময়।’
তবে অলিম্পিকে সুযোগ পাওয়ার থেকেও বেশি উত্তেজিত অলিম্পিকে ৭টি সোনাজয়ী ও বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে ২১টি সোনাজয়ী কিংবদন্তী সাঁতারু কেটি লেডেকির সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পাবেন বলে। ধিনিধির কথায়, ‘আমি গত বছর লেডেকির জন্য একটা শুভেচ্ছা কার্ড তৈরি করেছিলাম। ভাবতাম যখনই দেখা করার সুযোগ পাব, আমি এটা তার হাতে তুলে দেব। খুব অল্প বয়স থেকেই লেডেকিকে অনুসরণ করে এগিয়ে চলেছি। ভাগ্যক্রমে এই সুযোগটা এসে গেছে। প্যারিসে কার্ডটা আমি তার হাতে তুলে দিতে পারব।’
বন্ধুদের সঙ্গে মজা করাটা খুব মিস করে ধিনিধি। তার আক্ষেপ, ‘কখনও কখনও আমি আমার বয়সী বাচ্চাদের সঙ্গে মজা করাটা মিস করি। বন্ধুদের সাথে খুব বেশি বাইরে যাই না এবং একাকীত্ব বোধ করি। আমি সাঁতার কাটতে চেয়েছিলাম এবং আমি অলিম্পিকে যেতে চেয়েছিলাম। তার জন্য এই পথটি বেছে নিয়েছি। এর সঙ্গে অনেক ত্যাগস্বীকার করতে হয়েছে। গর্বিত বোধ করি। ১৪ বছর বয়সে আমি অলিম্পিকে যাচ্ছি। তাই সমস্ত ত্যাগের মূল্য আছে। ভারতীয় দলে সবচেয়ে কম বয়সী হওয়া বড় সম্মানের।’