টানা তিন বছর কলকাতা প্রিমিয়ার লিগে চ্যাম্পিয়ন মহমেডান স্পোর্টিং। ক্লাব কর্তা থেকে শুরু করে সমর্থকরা স্বপ্ন দেখেছিলেন আইএসএলে খেলার। গত মরশুমে আই লিগ চ্যাম্পিয়ন হয়ে সে স্বপ্নও পূরণ হয়েছে। ক্লাবকে ঘিরে সমর্থকদের প্রত্যাশা অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে। ময়দানে ফিরে এসে আবার সেই পরিচিত ‘সাদাকালো’ আবেগ। সমর্থকদের আবেগকে নাকি গুরুত্ব দিচ্ছিলেন না কর্তারা। অবশেষে সিদ্ধান্ত বদল। নিজেদের মাঠ থেকে ম্যাচ সরিয়ে নিচ্ছে মহমেডান। ডুরান্ড কাপে কোয়ার্টার ফাইনালে উঠলে সেরা দল নামানোরও প্রতিশ্রুতি ফুটবল সচিব দীপেন্দু বিশ্বাসের।
নতুন মরশুমের শুরুতেই হতাশা। কলকাতা লিগে উয়াড়ির বিরুদ্ধে দুর্দান্ত জয় দিয়ে শুরু করলেও ছন্দপতন। পরপর দুটি ম্যাচে পয়েন্ট নষ্ট। দ্বিতীয় ম্যাচে ড্র, পরের ম্যাচে হার। এরপর দুটি ম্যাচে জিতলেও ইউনাইটেড স্পোর্টসের কাছে আবার হার। আর এতেই ধৈর্ষের বাঁধ ভেঙেছে সাদাকালো সমর্থকদের। ক্লাব কর্তাদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগড়ে দিচ্ছেন সমর্থকরা। দলের খেলায় এতটাই বীতশ্রদ্ধ, ম্যাচ বয়কটেরও ডাক দিয়েছেন।
গত মরশুমে দুর্দান্ত খেলা মহমেডানের কেন এই হাল? আসলে গত মরশুমের দলের সঙ্গে এই মরশুমের দলের আকাশপাতাল পার্থক্য। অধিকাংশ ফুটবলারই নতুন। অনেকের কলকাতা কাদা মাঠে খেলার অভিজ্ঞতা নেই। কোচ হাকিম সেনজেন্দোও এখনও দলটাকে ঠিকভাবে তৈরি করতে পারেননি। ফলে সমস্যা হচ্ছে। তাছাড়া গত মরশুমে আক্রমণভাগে দুরন্ত ফুটবল খেলেছিলেন ডেভিড, আঙ্গুসানা, সেখ ফৈয়াজরা, রেমসাঙ্গা, জেমস সিং, দীপু ঘোষ। এবছর দলে ডেভিডের মতো স্ট্রাইকার কোথায়? আইএসএলের জন্য আঙ্গুসানা, ফৈয়াজ, রেমসাঙ্গাদের কলকাতা লিগে খেলানো হচ্ছে না। ফলে টানা তিনবারের লিগ চ্যাম্পিয়নদের অন্যরকম লাগছে।
সমর্থকদের দাবি মেনে নিজেদের মাঠ থেকে ম্যাচ সরানোর উদ্যোগ নিয়েছেন কর্তারা। আগামী ২৫ জুলাই পাঠচক্রের বিরুদ্ধে ম্যাচ খেলবে নৈহাটিতে। ফুটবল সচিব দীপেন্দু বিশ্বাস বলছিলেন, ‘সমর্থকদের আবেগের কথা বুঝতে পারছি। আমাদেরও খারাপ লাগে। আমরা লিগের ম্যাচ নৈহাটি স্টেডিয়ামে খেলব। এই ব্যাপারে অনুরোধ জানিয়ে আইএফএ–কে চিঠিও দিয়েছি।’
আইএসএলের দল গঠনের ব্যাপারেও কর্তাদের গড়িমসিতে ক্ষিপ্ত সমর্থকরা। তাঁদের অভিযোগ, কলকাতার অন্য দুই প্রধান আইএসএলের জন্য যেখানে শক্তিশালী দল গড়ার দিকে নজর দিয়েছে, মহমেডান অনেকটাই পিছিয়ে। ভালমানের দেশীয় ফুটবলার তো নেই–ই। ভাল বিদেশি নিয়ে আসার ব্যাপারেও কোনও হেলদোল নেই। কর্তাদের ওপর যথেষ্ট বিরক্ত সমর্থকরা। সোশ্যাল মিডিয়ায় রীতিমতো তো কর্তাদের সরে যাওয়ার দাবি উঠেছে।
এরমধ্যে ক্লাব কর্তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, ডুরান্ড কাপেও লিগের দলটাকে খেলানো হবে। ঐতিহ্যবাহী ডুরান্ড কাপে দ্বিতীয় সারির দল খেলানোর সিদ্ধান্তও মানতে পারছেন না সমর্থকরা। ইতিমধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়ায় এই নিয়ে সরব তাঁরা। ডুরান্ড কাপে সেরা দল খেলানো নিয়ে ফুটবল সচিব দীপেন্দু বিশ্বাস বলেন, ‘আমরা জুলাইয়ের ২৭–২৯ তারিখ নাগাদ আইএসএল দলের অনুশীলন শুরু করব। ২১ দিনের প্রাক–মরশুম প্র্যাকটিস ছাড়া কোচ ফুটবলারদের মাঠে নামতে দেবে না। কারণ, তার আগে ফুটবলাররা ফিট হবে না। কলকাতা লিগের আগে আমরা দিন পাঁচেক অনুশীলন করে মাঠে নেমেছি। তার ফল তো সবাই দেখছে। দল যদি ডুরান্ড কাপের কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠে, তখন সেরা দল মাঠে নামাব।’
সমর্থকদের আবেগকে গুরুত্ব দিয়ে সিদ্ধান্ত বদল মহমেডান কর্তাদের। ইস্টবেঙ্গল, মোহনবাগানের থেকে মহমেডানের সমর্থক কিন্তু অনেক বেশি। শুধু গোটা ভারতবর্ষে নয়, বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তেও ছড়িয়ে আছে। তাঁদের আবেগকে তো মর্যাদা দিতেই হবে।
আরও পড়ুনঃ বাংলার রিচার হাত ধরে রেকর্ড রান, মহিলাদের এশিয়া কাপের আমীরশাহীকে ৭৮ রানে উড়িয়ে দিল ভারত