দীর্ঘদিন ভারতীয় ফুটবলের দায়িত্বে ছিলেন বিদেশি কোচেরা। তাঁদের হাত ধরে একচুলও এগোয়নি ভারতীয় ফুটবল। বিদেশির পরিবর্তে এবার স্বদেশি কোচের ওপর ভরসা রেখেছে ফেডারেশন। দায়িত্ব তুলে দিয়েছে খালিদ জামিলের হাতে। কোচের হটসিটে বসেই অভিষেক ম্যাচে দেশকে দুর্দান্ত জয় এনে দিলেন খালিদ জামিল। কাফা নেশনস কাপের প্রথম ম্যাচেই আয়োজক তাজিকিস্তানকে ২–১ ব্যবধানে হারিয়েছে ভারত। ১৭ বছর পর মধ্য এশীয় এই দলের বিরুদ্ধে জয় এল। ভারতের হয়ে দুটি গোল করেন আনোয়ার আলি ও সন্দেশ ঝিঙ্ঘান।
ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে তাজিকিস্তানের থেকে অনকেটাই পিছিয়ে ভারত। তাজিকিস্তান রয়েছে ১০৬ নম্বরে, আর ভারত ১৩৩–এ। মাঠে অবশ্য তার প্রভাব বুঝতে দেননি ফুটবলাররা। দারুণ শুরু করেছিল ভারত। একের পর এক আক্রমণ তুলে নিয়ে এসে ব্যতিব্যস্ত করে দিয়েছিল তাজিকিস্তান রক্ষণকে। খালিদ জামিলের লক্ষ্য ছিল, শুরুতেই আক্রমণে ঝড় বইয়ে গোল তুলে নেওয়া। সেই লক্ষ্যে সফলও। ম্যাচের ৫ মিনিটেই এগিয়ে যায় ভারত। মুহাম্মদ উভেসের লম্বা থ্রো বক্সের মধ্যে হেড করেন আনোয়ার আলি। বল গোলে ঢোকার মুখে প্রতিহত করার চেষ্টা করেন তাজিকিস্তানের এক ডিফেন্ডার। কিন্তু ব্যর্থ হন। বল তাঁর মাথায় লেগে জালে জড়িয়ে যায়।
শুরুতে এগিয়ে গিয়ে আত্মবিশ্বাস বেড়ে যায় ভারতীয় ফুটবলারদের। আক্রমণের চাপ বাড়িয়ে দেয়। ১৩ মিনিটেই ব্যবধান বাড়িয়ে নেয় ভারত। আনোয়ার আলির সেন্টারে হেড করেছিলেন রাহুল ভেকে। হাসানভ আংশিক প্রতিহত করলে বল চলে যায় সন্দেশ ঝিঙ্ঘানের কাছে। বল জালে পাঠাতে কোনও ভুল করেননি ভারতের এই ডিফেন্ডার। ২ গোলে পিছিয়ে পড়েও চাপে পড়ে যায়নি তাজিকিস্তান। ম্যাচ থেকে হারিয়ে না গিয়ে দারুণভাবে ফিরে আসে। সামিয়েভ এবং বোবোয়েভের যুগলবন্দীতে ২৩ মিনিটে ব্যবধান কমায়। বোবোয়েভ বক্সের মধ্যে সন্দেশকে পরাস্ত করে বল দেন সামিয়েভকে। গুরপ্রীতকে টেনে নিয়ে এসে ফাঁকা জালে বল ঠেলেন সামিয়েভ। তাজিকিস্তান এরপর চাপ বজায় রাখলেও লিড ধরে রাখে ভারতীয় রক্ষণ।
দ্বিতীয়ার্ধে ম্যাচ কার্যত পরিণত হয়েছিল তাজিকিস্তানের আক্রমণভাগের সঙ্গে ভারতীয় রক্ষণভাগের। তাজিকিস্তান আক্রমণে ঝড় তুলেছিল। তিনকাঠির নীচে এই সময় অপ্রতিরোধ্য হয়ে ওঠেন গুরপ্রীত সিং সান্ধু। জালিলভ, সাফারভ এবং শুকুরভের তিন–তিনটি নিশ্চিত গোলের প্রয়াস রুখে দেন ভারতীয় দলের এই গোলকিপার। ৭২ মিনিটে সমতা ফেরানোর সুযোগ এসেছিল তাজিকিস্তানের সামনে। এবারও বাধা হয়ে দাঁড়ান গুরপ্রীত। সোইরভকে বক্সের মধ্যে ফাউল করেন বিক্রম প্রতাপ সিং। রেফারি পেনাল্টির নির্দেশ দেন। সোইরভের শট ডানদিকে ঝাঁপিয়ে বাঁচান গুরপ্রীত। ম্যাচের শেষের দিকে ইরফান গুরুতর চোট পেয়ে মাঠের বাইরে বেরিয়ে গেলে ভারতের কাজ আরও কঠিন হয়ে পড়ে। ম্যাচের একেবারে অন্তিম মুহূর্তে আবার সমতা ফেরানোর সুযোগ এসেছিল তাজিকিস্তানের সামনে। হানোনভের হেড অল্পের জন্য লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়।
২০০৮ সালের এএফসি চ্যালেঞ্জ কাপে তাজিকিস্তানের বিরুদ্ধে প্রথম জয় পেয়েছিল ভারত। সেই ম্যাচে দুরন্ত হ্যাটট্রিক করেছিলেন সুনীল ছেত্রীর। দীর্ঘ ১৭ বছর পর আবার তাজিকিস্তানের বিরুদ্ধে জয় পেল ভারত। মোট সাতটি ম্যাচ এটা ভারতের দ্বিতীয় জয়। এই জয় জামিলকে কোচ হিসেবে স্বপ্নের সূচনা এনে দেয়নি, গ্রুপ ‘বি’ থেকে ভারতের নক আউটে যাওয়ার সম্ভাবনাও বাড়িয়ে দিল। ১ সেপ্টেম্বর ভারতের পরের ম্যাচ ইরানের বিরুদ্ধে এবং ৪ সেপ্টেম্বর আফগানিস্তানের মুখোমুখি হবে।