‘বাঙাল–ঘটির একই স্বর
জাস্টিস ফর আর জি কর’
ইস্টবেঙ্গল–মোহনবাগানের লড়াই দেখেছে শহর কলকাতা। ঘটি–বাঙালের একতা দেখেনি। ইলিশ–চিংড়ির লড়াই দেখেছে তিলোত্তমা। বাঙালির আবেগ বোঝেনি। প্রশাসন ডুরান্ড কাপের ডার্বি বাতিল করেছে। কিন্তু তার পরিনাম কী হতে পারে, ভেবে দেখেনি। ডার্বি বাতিলকে কেন্দ্র করে আছড়ে পড়ল প্রতিবাদের ঢেউ। নিঃস্বার্থভাবে এগিয়ে এল মহমেডান সমর্থকরাও। কলকাতার তিন ক্লাবের সমর্থকদের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে প্রতিবাদের এক অনন্য দৃশ্যের সাক্ষী থাকল তিলোত্তমা।
রবিবার ছিল ডুরান্ড কাপে ইস্টবেঙ্গল–মোহনবাগান ম্যাচ। আর জি কর কাণ্ডে ন্যায় বিচারের দাবিতে যুবভারতীর গ্যালারিতে সরব হওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন দুই দলের সমর্থকরা। একটা ময়দানি স্লোগান ছড়িয়ে গিয়েছিল, ‘গ্যালারিতে এক স্বর, জাস্টির ফর আর জি কর।’ খেলার ফল যাই হোক, গ্যালারি যেন ন্যায়বিচারের দাবিতে গর্জে ওঠে। তাই দুই শিবিরই প্রস্তুতি চালাচ্ছিল নিজেদের মতো করে। ভয় পেয়ে গিয়েছিল প্রশাসন। আর সেই ভয়েই ডার্বি বাতিল।
ডার্বি বাতিলের প্রতিবাদে দুই দলের সমর্থকরা রবিবার যুবভারতীর সামনে প্রতিবাদ জানানোর পরিকল্পনা করেছিল। সমর্থকদের প্রতিবাদ মিছিলের কথা জেনে বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেটের পক্ষ থেকে যুবভারতীর সামনে ও তার আশপাশ অঞ্চলে ১৬৩ ধারা জারি করে। বিশাল পুলিশবাহিনী মোতায়েন করা হয়। তাতেও আটকানো যায়নি ইস্টবেঙ্গল–মোহনবাগান–মহমেডান সমর্থকদের। কারও গায়ে লাল–হলুদ, সবুজ–মেরুন জার্সি, কারও গায়ে সাদা–কালো। কেউ আবার পরে এসেছেন সাদা পোশাক। কেউ আবার কালো। হাতে লাল–হলুদ, সবুজ–মেরুন পতাকা। কারও হাতে জাতীয় পতাকা। অনেকের হাতেই ‘তিন প্রধানের একই স্বর, জাস্টিস ফর আর জি কর’ লেখা পোস্টার। মুখেও একই স্লোগান। মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করেন ফুটবলপ্রেমীরা।
শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদ মিছিল চলছিল। এরপরই ফুটবলপ্রেমীদের ছত্রভঙ্গ করতে লাঠি চালায় পুলিশ। রণক্ষেত্র হয়ে ওঠে ইএম বাইপাস। অনেককে আটক করে প্রিজন ভ্যানে তোলা হয়। প্রতিবাদে সামিল হওয়া অনেক মহিলা অভিযোগ করেন, মহিলা পুলিশ ছাড়াই নাকি তাঁদের গায়ে হাত তোলা হয়েছে। ফুটবলপ্রেমীরা স্লোগান তোলেন, উই ওয়ান্ট জাস্টিস। মহিলাদের নিরাপত্তারও দাবি তোলেন তাঁরা। ফুটবলপ্রেমীদের বক্তব্য, তাঁরা শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদ জানাতে এসেছিলেন। পুলিশ বিনা প্ররোচণায় লাঠি চার্জ করেছে।
বেশ কয়েকজনকে আটক করে প্রিজন ভ্যানে তুলে থানায় নিয়ে যাচ্ছিল। ফুটবলপ্রেমীরা প্রিজন ভ্যানের সামনে রাস্তা অবরোধ করে বসে পড়েন। পুলিশ আটকদের ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়। এরই মাঝে প্রতিবাদকারীদের মাঝে হাজির হন সর্বভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি কল্যাণ চৌবে। তিনি নৈতিক সমর্থন জানান।
এদিন পুলিশ ছাড়াও প্রচুর সংখ্যক র্যাফ মোতায়েন ছিল। যত পুলিশ ছিল, ডার্বি ম্যাচেও এত পুলিশ মোতায়েন থাকে না। নিয়মিত মাঠে খেলা দেখতে যাওয়া ফুটবলপ্রেমীদের দাবি, ডার্বিতে এর অর্ধেক পুলিশ থাকে। প্রশ্ন উঠছে, নিরাপত্তা দিতে পারবে না বলে বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেট ডার্বি ম্যাচ আয়োজনের অনুমতি দেয়নি। তাহলে এদিন ফুটবলপ্রেমীদের প্রতিবাদ আটকাতে এত পুলিশ এল কোথা থেকে? যদিও ফুটবলপ্রেমী জনতার কাছে হার মানল প্রশাসন। বলতে গেলে তিনপ্রধানের সম্মিলিত প্রয়াসের কাছে এক ডজন গোলে হার প্রশাসনের। শেষপর্যন্ত কার্যত হাল ছেড়ে দেয় পুলিশ। বৃষ্টি মাথায় করেও রাত পর্যন্ত চলল প্রতিবাদ। সন্ধে গড়িয়ে রাত বাড়ল। প্রতিবাদের সুরও ক্রমশ চড়ল। ন্যায় বিচারের দাবিতে তিন প্রধানের সমর্থকরা যে প্রতিবাদে সামিল হল, তা গোটা বিশ্বে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।