বছরখানেক আগে পর্যন্ত ডার্বি মানেই মোহনবাগানের আধিপত্য। একের পর এক ডার্বি হেরে মনোবল একেবারে তলানিতে পৌঁছে গিয়েছিল। গত মরশুমে কার্লেস কুয়াদ্রাত দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই ছবিটা বদলে গেছে। গতবছর ডুরান্ড কাপে মরশুমের প্রথম ডার্বি জেতার পরই লালহলুদ ব্রিগেডের মনোবল অনেকটাই বেড়ে গিয়েছিল। ১৯২৫ সালে কলকাতা লিগের প্রথম ডার্বিতে জিতেছিল ইস্টবেঙ্গল। লিগের ডার্বির শতবর্ষেও সেই বাজিমাত লালহলুদের। মরশুমের প্রথম ডার্বিতে জয় ২–১ ব্যবধানে। ইস্টবেঙ্গলের দুই গোলদাতা পিভি বিষ্ণু ও আমন সিকে।
বড় ম্যাচে সম্মানের কথা মাথায় রেখে এদিন প্রথম একাদশে বেশ কয়েকটা পরিবর্তন করেছিলেন ইস্টবেঙ্গল কোচ বিনো জর্জ। গোলে যেমন দেবজিৎ মজুমদার, তেমনই রক্ষণে আদিল আমন, মনোতোষ চাকলাদার, হীরা মণ্ডল, জোশেফ জাস্টিন। তেমনি আক্রমণভাগে ডেভিড ও পিভি বিষ্ণু। অন্যদিকে, মোহনবাগান খুব বেশি বদল ঘটায়নি। রক্ষণ শক্তিশালী করতে ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার গ্লেন মার্টিন্সকে শুরু খেকেই নামিয়েছেন বাগান কোচ ডেগি কার্ডোজা।
ম্যাচের শুরু থেকেই আক্রমণে ঝড় তুলেছিল ইস্টবেঙ্গল। ৩ মিনিটেই গোলের সুযোগ এসেছিল ইস্টবেঙ্গলের সামনে। ডানদিক থেকে উঠে এসে সেন্টার করেছিলেন রোশল। সুবিধাজনক জায়গা থেকে বল বাইরে মারেন তন্ময় দাস। ২০ মিনিটে আরও একটা সুযোগ পেয়েছিল ইস্টবেঙ্গল। কাজে লাগাতে পারেননি বিষ্ণু। বাঁদিক থেকে ইস্টবেঙ্গলের আমন সিকে বারবার আক্রমণ তুলে নিয়ে এসে ব্যতিব্যস্ত রাখছিলেন বিজয় বাসফোরকে। রোশল পিপি ডানদিক দারুণ সচল রেখেছিলেন। তাঁর গতি রোধ করার জন্য মোহনবাগান কোচ ডেগি কার্ডোজা নামিয়েছিলেন লিওন কাস্টানাকে।
৩০ মিনিটের পর থেকে আস্তে আস্তে খেলায় ফেরে মোহনবাগান। ডানদিক থেকে গঠনমূলক আক্রমণ তুলে নিয়ে আসছিলেন ফারদিন আলি মোল্লা। কয়েকটা ভাল থ্রু বাড়িয়েছিলেন। কিন্তু কাজে লাগাতে পারেননি গ্লেন মার্টিন্স, আমনদীপরা। নবগঠিত ইস্টবেঙ্গল রক্ষণের সামনে একেবারেই ম্রিয়মান ছিলেন মোহনবাগানের একমাত্র স্ট্রাইকার সুহেল ভাট। প্রথমার্ধের ইনজুরি সময়ে ইস্টবেঙ্গলের পিভি বিষ্ণুর সামনে আরও একটা সুযোগ এসেছিল। তাঁর শট বারের ওপর দিয়ে বেরিয়ে যায়। প্রথমার্ধে খেলার ফল থাকে গোলশূন্য।
দ্বিতীয়ার্ধে দুই দলই কয়েকটা পরিবর্তন করে মাঠে নামে। মোহনবাগান কোচ ডেগি কার্ডোজা মাঠে নামান টাইসন সিং, ব্রিজেশ গিরিদের। ইস্টবেঙ্গল কোচ বিনো জর্জ মাঠে নামান সায়ন ব্যানার্জি, সার্থক গোলুইকে। শুরুতেই গোলের সুযোগ এসেছিল ইস্টবেঙ্গলের সামনে। বাঁদিক থেকে ভেসে আসা সেন্টারে গোল লক্ষ্য করে ভলি করেছিলেন আমন সিকে। গোললাইন থেকে সেভ করেন মোহনবাগানের এক ডিফেন্ডার। তবে গোলের জন্য বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়নি লালহলুদকে। ৫০ মিনিটে এগিয়ে যায় ইস্টবেঙ্গল। সেন্টার লাইনের কাছ থেকে সার্থক গোলুইয়ের ফ্রিকিক মোহনবাগান বক্সে দারুণভাবে রিসিভ করে ইনসাইড ডজে ডিফেন্ডারকে ছিটকে দিয়ে বাঁপায়ের দুর্দান্ত প্লেসিংয়ে গোল করেন পিভি বিষ্ণু।
৬০ মিনিটে ব্যবধান বাড়ানোর সুযোগ এসেছিল ইস্টবেঙ্গলের সামনে। জেসিন টিকে–র পাস বক্সের মধ্যে পেয়েছিলেন আমন সিকে। সামনে শুধু গোলকিপার। রাজা বর্মণ এগিয়ে এসে আমনের শট আটকে দেন। ৬৫ মিনিটে মোহনবাগানের ডিফেন্সের ভুলে ব্যবধান বাড়ায় ইস্টবেঙ্গল। গোলকিপার রাজা বর্মন পাস দিয়েছিলেন সৌরভ ভানওয়ালাকে। সঠিকভাবে বল স্ন্যাচ করতে পারেননি সৌরভ। আমন সিকে তাড়া করে বলের দখল নিয়ে থ্রু বাড়ান। সেই বল জালে পাঠান জেসিন টিকে। ৬৮ মিনিটে তৃতীয় গোলের সুযোগ এসেছিল ইস্টবেঙ্গলের সামনে। আমন সিকে–র সেন্টার তিনকাঠিতে রাখতে পারেননি ওভারল্যাপে উঠে আসা হীরা মণ্ডল।
৭৬ মিনিটে বড় ধাক্কা খায় ইস্টবেঙ্গল। সালাউদ্দিনকে ফাউল করার জন্য দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখেন জোশেফ জাস্টিন। রেফারি লাল কার্ড দেখিয়ে তাঁকে মাঠ থেকে বার করে দেন। ১০ জন হয়ে যায় ইস্টবেঙ্গল। মোহনবাগানের সুযোগ নেওয়া উচিত ছিল। কিন্তু পারেনি। ৮২ মিনিটে ব্রিজেশ গিরির সেন্টারে কেউ পা ছোঁয়াতে পারেননি। ইনজুরি সময়ের শুরুতেই দারুণ জায়গায় ফ্রিকিক পেয়েছিল মোহনাবাগান। ফারদিন মানব প্রাচীরে মেরে নষ্ট করেন। ইনজুরি সময়ের শেষ মুহূর্তে টাইসন সিংয়ের সেন্টার থেকে হেডে গোল করে ব্যবধান কমান সুহেল ভাট।