বিশ্বকাপ বাছাই পর্বের ম্যাচে আর্জেন্টিনার মুখোমুখি হওয়ার আগে ব্রাজিলের ফরোয়ার্ড রাফিনিয়া রোমারিওর সঙ্গে এক পডকাস্টে বলেছিলেন, ‘আর্জেন্টিনাকে গুঁড়িয়ে দেব। শুধু মাঠের ভেতরে নয়, দরকার পড়লে মাঠের বাইরেও।’ তাঁর সেই হুঙ্কার যে ফাঁকা আওয়াজ ছাড়া কিছুই ছিল লা, প্রমাণিত। উল্টে ব্রাজিলকেই গুঁড়িয়ে দিল আর্জেন্টিনা। লিওনেল স্ক্যালোনির দল জিতল ৪–১ ব্যবধানে।
এদিন ব্রাজিলের বিরুদ্ধে মাঠে নামার আগেই ২০২৬ বিশ্বকাপের যোগ্যতা অর্জন করে ফেলে আর্জেন্টিনা। উরুগুয়েকে বলিভিয়া হারাতে না পারায় ব্রাজিলের মুখোমুখি হওয়ার আগেই বিশ্বকাপের মূলপর্বে খেলা নিশ্চিত হয়ে যায় লিওনেল স্ক্যালোনির দলের। উরুগুয়ের সঙ্গে ড্র করে ১৪ ম্যাচে ১৪ পয়েন্ট নিয়ে সাত নম্বরে বলিভিয়া। শীর্ষে থাকা আর্জেন্টিনার সংগ্রহ ১৩ ম্যাচে ২৮ পয়েন্ট। বলিভিয়া বাছাইপর্বে বাকি চারটি ম্যাচ জিতলেও আর্জেন্টিনাকে স্পর্শ করতে পারবে না। ফলে ব্রাজিলের বিরুদ্ধে মাঠে নামার আগেই বিশ্বকাপের ছাড়পত্র পেয়ে যায় আর্জেন্টিনা।
তবে বিশ্বকাপের ছাড়পত্র পাওয়ার উদযাপন যে এভাবে নির্মমভাবে করবে, বিন্দুমাত্র আঁচ করতে পারেননি রাফিনিয়ারা। ব্রাজিলকে নিয়ে এদিন ছেলেখেলা করল স্ক্যালোনির দল। তাও আবার লিওনেল মেসি, লাওতারো মার্টিনেজদের ছাড়াই। ম্যাচের প্রথম ২ মিনট ভিনিসিয়াসরা তো বলই স্পর্শ করতে পারেননি। ৪ মিনিটেই হুলিয়ানো আলভারেজ গোল করে এগিয়ে দেন আর্জেন্টিনাকে। বিশ্বকাপ বাছাই পর্বে য়ে ব্রাজিল–আর্জেন্টিনা ম্যাচে তৃতীয় দ্রুততম। ১২ মিনিটে ব্যবধান বাড়ান এনজো ফার্নান্ডেজ। আর্জেন্টিনার বিরুদ্ধে আগে কখনও এত দ্রুত ২ গোল হজম করেনি ব্রাজিল।
এরপর কিছুটা ম্যাচে ফিরে আসে ব্রাজিল। তাও আবার আর্জেন্টিনার সৌজন্যে। ২৬ মিনিটে ক্রিস্টিয়ান রোমেরোর কাছ থেকে বল কেড়ে নিয়ে ডান পায়ের জোরালো শটে গোল করেন মাথিয়াস কুনিয়া। এটাই আর্জেন্টিনার গোল লক্ষ্য করে ব্রাজিলের প্রথম শট। ২০১৯ কোপা আমেরিকা সেমিফাইনালের পর এই প্রথম আর্জেন্টিনার জালে বল ঢোকাল ব্রাজিল। ৩৭ মিনিটে আর্জেন্টিনাকে ৩–১ ব্যবধানে এগিয়ে দেন অ্যালেক্সিস ম্যাক অ্যালিস্টার। এনজো ফার্নান্ডেজের মাপা সেন্টারে দুরন্ত ভলি করে গোল করে ম্যাক অ্যালিস্টার।
ম্যাচে ফিরতে মরিয়া ব্রাজিল দ্বিতীয়ার্ধে ৩টি পরিবর্তন করে। রড্রিগোর জায়গায় এনড্রিক, জোয়েলিংটনের জায়গায় জোয়াও গোমেজ ও মুরিল্লোর জায়গায় লিও ওর্টিজ। তাতে বদলায়নি ব্রাজিল। আর্জেন্টিনা আক্রমণে আসলেই রীতিমতো কেঁপে গেছে। ৫৬ মিনিটে আলমাদার শট পোস্টের ওপর দিয়ে চলে যায়। ৬১ মিনিটে বক্সের ভেতর থেকে হেডে নিশ্চিত গোল মিস করেন নিকোলাস তালিয়াফিকো। ৭১ মিনিটে আর্জেন্টিনার হয়ে চতুর্থ গোল করেন আলমাদার বদলি নামা জিউলিয়ানো সিমিওনে। তালিয়াফিকোর সেন্টারে দুরূহ কোণ থেকে জোরালো শটে গোল করেন আর্জেন্টিনার প্রাক্তন ডিফেন্ডার দিয়েগো সিমিওনের এই সুযোগ্য সন্তান। ব্রাজিলের লজ্জা আরও বাড়ত যদি লিয়ান্দ্রো পারদেস, এনজো ফার্নান্ডেজ, রদ্রিগো দি পলরা গোলের সহজ সুযোগ নষ্ট না করতেন।
১৪ ম্যাচে ৩১ পয়েন্ট নিয়ে দক্ষিণ আমেরিকা বাছাইয়ে টেবিলের শীর্ষে আর্জেন্টিনা। সমসংখ্যক ম্যাচে ২৩ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে ইকুয়েডর। চিলির সঙ্গে গোলশূন্য ড্র করেছে তাঁরা। ১৪ ম্যাচে ২১ পয়েন্ট নিয়ে তৃতীয় উরুগুয়ে। ব্রাজিলের সংগ্রহও ১৪ ম্যাচে ২১ পয়েন্ট, চারে দরিভালের দল।